‘মাইরের উপর ঔষধ নাই’ ফেসবুকে বন্দর ইউএনও’র স্ট্যাটাস
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার৷ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ এ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন৷ সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে দেয়া তাঁর স্ট্যাটাসটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতিমধ্যে তাঁর স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ `বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’। পাঠকদের জন্য তাঁর দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো...
গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রী আসছে, এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় সবাই দুইয়ের অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য। আবদার আমি যেন তাদের পাশ করে দেবার সুপারিশ করি। তাদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা ফেল করলো, ছাত্রছাত্রীদের ভাষ্য “এই একটু সমস্যা ছিল।” কি সমস্যা খোলাসা করে বলে না। বেশিরভাগ মা বাবা বলল তাদের সন্তানরা পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল। অসুস্থতার ধরন জিজ্ঞেস করলে বলে সবার জ্বর ছিল। কেউ কেউ বলল কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নাই তাই ফেল করিয়েছে। কোন কোন মা বলল তাদের সংসারে অশান্তি, ছেলে পড়তে পারেনি। একজন ছাত্র বলল প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে ঢুকতে দেয় না, চুলে আর্মি কাট দিতে বলে এবং খুব আশ্চর্য লাগলো ছেলের মাও একই বিষয়ে অভিযোগ করছে! জিজ্ঞেস করলাম এইচএসসির পূর্নরুপ কি? মাশাল্লাহ কেউই বলতে পারলো না। ওহো এরমধ্যে আবার সরকারি স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া ছেলেমেয়েদের বাবা মা আছেন। আজ একজন বাবা তার মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পেরোনো ছেলের সামনে বলছেন, “ম্যাডাম আমার ছেলে বলে দিছে সে যদি এই স্কুলে না ভর্তি হতে পারে তাহলে আর লেখাপড়াই করবে না!” শাব্বাস বাপ বেটা!
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের মনে কেন এত মায়া, মায়ার বশে আপনারা পরীক্ষার হলে বাচ্চাদের কথা বলতে দেন, তারা একজন আর একজনের দেখে লিখলেও আপনারা তা দেখেন না। এখনো কেন শুনতে হয়,”এই চুপ কর, ম্যাজিস্ট্রেট আসছে।” আপনারা মনে করেন বাচ্চাগুলা পাশ করুক, ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষার হলে সুযোগ দিয়ে কেন? কেন আপনাদের শুনতে হবে আপনাদের কাছে না পড়লে আপনারা ফেল করায় দেন। আপনারা কি ভাবেন এতে করে বাচ্চাগুলার উপকার হচ্ছে, তারা আপনাদের মনে রাখবে? একটা সময়ে এরাই আপনাকে অসম্মান করবে, পাত্তাই দেবে না।
প্রিয় বাবা মা, আপনি আপনার সন্তানের সামনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, শিক্ষককে ছোট করছেন, আপনার সন্তান আর কদিন পর আপনাকে সম্মান করবে তো! সন্তান ফেল করলে কিংবা চান্স না পেলে সব শিক্ষকের দোষ, প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সিস্টেম ভাল না, টাকা খেয়েছে ব্লা ব্লা। কোনো শিক্ষকের কি এই সাধ্য আছে যে খাতায় লেখার পরও তাকে ফেল করায় দেয়! যে বাচ্চাটা ইংরেজিতে তিন কিংবা তের পেয়েছে। তাকে কিভাবে তেত্রিশ করবে! বাচ্চাকে শখ করে, আদরের আতিশয্যে, আধুনিকতার সংস্পর্শে আইফোন কিনে দিলেন, বাইক কিনে দিলেন কিন্তু সে আদৌ স্কুলে/কলেজে যায় কিনা কয়দিন খোঁজ নিয়েছেন। সে কার সাথে চলাফেরা করে খোঁজ নিয়েছেন শেষ কবে? কবে সে অন্য কাউকে খুব ছোট্ট কাজে ধন্যবাদ বলেছে? আচ্ছা সে কি কখনও তার স্কুলের দপ্তরী কে সালাম দিয়েছে? সে কি স্কুলের মাঠ যে ঝাড়ু দেয় তাকে থ্যাংকু বলেছে? সে যে রিকশায় আসা যাওয়া করে তাকে কোনেদিন থ্যাংকু বলেছে?
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন: মাইরের উপর ঔষধ নাই!
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম