০৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২ অক্টোবর ২০১৯

আপডেট: ১৫:৪৪, ২ অক্টোবর ২০১৯

সমাজে আলোকবর্তিকার মশাল হোক ‘আলোকিত কাশীপুর’

সমাজে আলোকবর্তিকার মশাল হোক ‘আলোকিত কাশীপুর’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এইতো সেদিনের কথা। গত শতকের শেষের সময়টার কথা বলছি। যখন আমাদের সামাজিক বন্ধনটা অনেক দৃঢ় ছিল। উৎসবে, পার্বনে, সামাজিকতায় আতিথিয়েতায় আমরা মিলেমিশে থাকতাম। সবাই সবার পরিচিত ছিলাম, রক্তের না হলেও আত্মার সম্পর্কটা আমাদের মাঝে বিরাজমান ছিল।

অতিদ্রুতই আমরা একটি নতুন যুগে পা রাখলাম। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের সামাজিক বন্ধনটা তাসের ঘরের মত ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। স্যাটেলাইট টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট আমাদেরকে আতœকেন্দ্রীক এক নতুন জগতে নিয়ে গেল। আমরা ভুলে যেতে বসলাম আমাদের সকল শিকড়, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর শিষ্টাচারকে। সমাজ সংস্কারের কাজগুলো থমকে গেল। পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে উঠা ক্লাব কেন্দ্রিক তৎপরতা স্থবির হয়ে পড়লো। একসাথে সামাজিক উদ্যোগ নেওয়ার মত লোকবল ও মেধার অভাব না থাকলেও সমন্বয়ের অভাবটা দেখা দিলো। এই সকল অস্থিরতার মাঝে, প্রযুক্তি দিয়েই সামাজিক ব্যাধিগুলোকে সারানোর উদ্যোম নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ফেসবুক গ্রুপ ‘আলোকিত কাশীপুর’।

কাশীপুর ইউনিয়ন কেন্দ্রিক এই ফেসবুক গ্রুপের সদস্যা সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৫ হাজারের মত, যারা সকলেই কাশীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। দিন দিন যার সদস্য বেড়েই চলছে। লাখ খানেক জনসংখ্যার এই ইউনিয়ন ফেসবুক চালায় মিনিমাম ৫০ হাজার সে হিসেবে কাশীপুর এর ১০ শতাংশ লোক এই গ্রুপের সদস্য বলে ধরে নেওয়া যায়, যারা অধিকাংশই বয়সে তরুণ। এক কথায় বলা যায় আগামীর কাশীপুরের কর্ণধার তারা। আমরা আশাবাদী একদিন এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪০/৫০ হাজার হবে।

মূলত কাশীপুরের ভালো-মন্দ, অনিয়ম-অসংগতি, ঐতিহ্য-সাফল্য তুলে ধরার জন্যই এই গ্রুপটা খোলা, সাথে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে সামাজিক কাজের অগ্রগতি তরান্বিত করাই এর গ্রুপের উদ্দেশ্য। রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, মাদক বিরোধী প্রচার, এই সকল কাজকে উৎসাহিত করা হয় গ্রুপ থেকে। আমরা সামাজিক বন্ধনটা আগের গ্রামীণ আবহে ফিরে না পেতে পারি, প্রযুক্তি দিয়েই নতুন একটি বন্ধনের অন্তর্জাল অন্তত তৈরি করতে পারবো, সেই বিশ্বাস রাখি।

‘আলোকিত কাশীপুর’ গ্রুপ চালাতে গিয়ে এডমিন প্যানেলকে প্রায় রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ব্যক্তির চক্ষুশূল হতে হয়। মাদক ব্যাবসায়ী-জুয়াড়িদের হুমকি-ধমকিও পাই, বিশিষ্ট নাগরিকদের রক্তচক্ষুও উপেক্ষা করতে হয় । তবে ভয়কে জয় করে এই গ্রুপটা সমাজ পরিবর্তনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, একটি নিরাপদ,মানবিক, পরিচ্ছন্ন কাশীপুর গড়তে। ‘ধান ভাঙতে এসে, শীবের গান না গেয়ে’ এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

‘আলোকিত কাশীপুর’ গ্রুপের পক্ষ থেকে আগামী ৪ অক্টোবর একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কাশীপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডেই। পুরো কাশীপুর নিয়ে এর আগে, একত্রে কোন সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই।

এবারের কোরবানির ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এবং ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর জন্য ৯ টি ওয়ার্ডে ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবী নিরলস কাজ করেছে। গ্রুপের পক্ষ থেকে এর আগে মাদক বিরোধী ব্যানার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎসাহব্যাঞ্জক ব্যানার সাটানো হয়েছে ইউনিয়ন ব্যাপী। এবারের ‘ক্লীন কাশীপুর’ উদ্যোগটা একটু ব্যাপক, ৯ টি ওয়ার্ডে আমরা প্রায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিজ নিজ এলাকা পরিস্কার করবো। যদিও সংখ্যাটা অপ্রতুল এবং এর দ্বারা পুরো কাশীপুর পরিস্কার করা সম্ভব নয়। তবু বলি, সমাজে অন্তত বার্তাটা পৌছাতে চাই, নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ এলাকা পরিস্কার রাখুন, তাহলে সকল কাজের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। সবার আগে নিজের মনের ময়লা পরিস্কার করুন, তাহলে দেখবেন, এলাকাও পরিস্কার হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্যটা আরো বিশাল, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে, ভবিষ্যতে আমরা কাজ করতে চাই। একটা একটা অসংগতি দূর করে, আমরা ‘আলোকিত কাশীপুর’ গড়তে আমাদের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবো, সেই আশাবাদও ব্যাক্ত করি।

আমরা প্রশাসনের কাউকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানাইনি তবু যদি কোন কর্তাব্যক্তিরা যদি লেখাটি পড়ে থাকেন তবে আপনাকে স্বাগতম, আসুন ৪ অক্টোবর সকালে আমাদের কাশীপুরে। তরুণ-তরুণী, যুবক শ্রেণি কোন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সাহায্য ছাড়াই নিজেদের নেতৃত্বে, সুশৃঙ্খলভাবে সমাজের কাজ করে যাচ্ছে এসে দেখে যান। সর্বোপরি আমাদের এই সকল উদ্যোগে সবসময় মানসিক ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যারা কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আর সেই সকল স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের কে আমাদের এডমিন প্যানেলের পক্ষ থেকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রানডালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। যারা নিরাপদ, মাদকমুক্ত, অন্যায়-দূর্নীতি মুক্ত, মানবিক, পরিচ্ছন কাশীপুর গঠনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

আগামীর কাশীপুর আমাদের কাশীপুর, আগামীর কাশীপুর ‘আলোকিত কাশীপুর’। ‘ক্লীন কাশীপুর" সেই নবযুগের সূচনা মাত্র। আনন্দের এই শুভলগ্নে আলোকিত কাশীপুর এর সকল সদস্য, মডারেটর, স্বেচ্ছাসেবীদের এডমিন প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আগামী ৪ অক্টোবর হোক পরিবর্তনের শুভ সূচনা, আলোকিত কাশীপুর হোক আলোকবর্তিকার সেই মশাল।

লেখক- শহীদুল ইসলাম খাঁ, চীফ এডমিন, আলোকিত কাশীপুর।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়