জলাবদ্ধতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী
ইশতিয়াক আহমেদ অনিক (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): জলাবদ্ধতার কারণে নিত্যদিনের দুর্ভোগের এলাকায় পরিণত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ইসদাইর। বর্ষা কিংবা শীত; সারা বছরই এলাকাটি থাকে পানির নিচে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো বছরই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। পানি নিষ্কাশনের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
সোমবার (২২ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেন্ট্রাল রোড এলাকা থেকে উত্তর ইসদাইরের শেষ মাথা পর্যন্ত এই জলাবদ্ধতা। স্থানীয়রা জানান, এই জলাবদ্ধতা সারা বছর জুড়েই থাকে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিও স্থায়ীভাবে জমে থাকে। সারা বছর এলাকাটিতে পানি থাকায় বাসা-বাড়ির ড্রেনের পানিও সেই পানির সাথে মিশছে। আর এই নোংরা পানিতেই বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল করতে হচ্ছে।
ওই এলাকার মের্সাস ইনসাফ ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, সারা বছরই এখানে পানি থাকে। বৃষ্টি ছাড়া ৮-১০ দিনে যতটুকু পানি শুকায় তা ২০ মিনিটের হালকা বৃষ্টিতে হলেই আবার হাটু সমান পানি উঠে যায়। এই এলাকার সামনে নতুন বাজার ছোট মসজিদ তৈরি করার সময় ওই এলাকাটা একটু উচু করা হয় যার ফলে আমাদের এলাকা নিচু হয়ে যাওয়ায় পানি এখানে জমে থাকে।
জলাবদ্ধতার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এই এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোকে। এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, সারা বছরই এলাকাটিতে পানি থাকার কারণে অধিকাংশ ভাড়াটিয়া স্থায়ী হন না। সামান্য বৃষ্টি হলেই নোংরা পানি ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতর। মোটরের সাথে উঠে আসে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। রান্নাঘরের চুলাও মাঝে মাঝে পানির নিচে ডুবে যায়।
মোল্লা টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার সাইফ ভিলার মালিক আরিফ আউয়াল জানান, আমার বাসার ১৩ জন ভাড়াটিয়া ছিল বছরের শুরুতে। ৬ মাসের মধ্যে সেখানে এখন ভাড়াটিয়া একজন। কোন ভাড়াটিয়াই কয়েক মাসের বেশি থাকেন না।
সারাবছর জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বাড়তি দুর্ভোগ হিসেবে যোগ হয়েছে মশা। এলাকাটি সবসময় পানির নিচে থাকায় সেখানে মশার উৎপাতও বেশি। সন্ধ্যার পরে মশার জন্য সেখানে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে।
উত্তর ইসদাইরের বাসিন্দা শম্পা বেগম বলেন, সন্ধ্যার পড়ে কোন কয়েলেই কাজ হয় না। মশার পরিমাণ অত্যাধিক। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এই জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য তো কিছু করেনই না। মশার উৎপাত কমানোর জন্য মশার ঔষধও ছিটান না। স্থানীয় সাংসদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমপিসাহেব শুধু ভোটের আগে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে আসেন। মা-খালা-চাচি ডাকেন, ভোট চান। কিন্তু ভোটের পরে আর কারো কোন খবর থাকে না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও আমাদের সমস্যাগুলো দেখতে আসেন না।
এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আলী আকবর জানান, এই সমস্যা আগে ছিল না। মানুষ এখানে জমি-জমা কিনে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরি করেছে। যার ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে কোন পরিকল্পনা করে স্থানীয়রা বাড়ি বানানোর ফলে এখানে জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। আর এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ গৃহস্থালীর যত ময়লা-আবর্জনা রয়েছে সব রাতের আঁধারে ড্রেনে ফালায়। তাই ড্রেন দিয়ে পানি যেতে পারে না। তাই এখানে সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে। তবে এমপি সাহেব ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ২টা পাম্প চালু করা হয়েছে। পানি দ্রুত কমে যাবে। আমি নিজেই ব্যবস্থা নিয়েছি পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হয় সেজন্য।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম