মোহাম্মদ আলীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার দাবি

নারায়ণগঞ্জে ‘ওসমান পরিবারের দোসর’ উল্লেখ করে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জড়ো হয়ে এ দাবি জানান তারা।
মোহাম্মদ আলীকে যেন কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে ডাকা না হয়, সে দাবিও জেলা প্রশাসকের কাছে জানান বিক্ষুব্দ রাজনৈতিক নেতারা।
দুপুরে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতা-কর্মীদের একটি দল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা।
এই সময় জামায়াতে ইসলামীর মহানগরের সাবেক আমীর মাওলানা মাইনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন ও মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লবও উপস্থিত ছিলেন।
‘মোহাম্মদ আলীকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, “সে (মোহাম্মদ আলী) জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলা করতে চায়। তাকে কোনো প্রোগ্রামে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন দাওয়াত দেওয়া না হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। কিন্তু উনি সবসময় দালালি করে। গত ১৬ বছর ধরে দালালি করছে। সাধারণ জনগণের পক্ষে কখনও কাজ করে নাই। এখন আবার নতুন করে সে বিশৃঙ্খলা করতে চাচ্ছে।”
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ আমলে যারা গডফাদার ছিল, সেই শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের সাথে তার (মোহাম্মদ আলী) যোগাযোগ আছে। সে স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। তাকে যেন কোনো প্রোগ্রামে না ডাকা হয়। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক।”
এ সময় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, “অতীত থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে উনি (মোহাম্মদ আলী) ভূমিকা রাখছেন। তার যেসব অপকর্ম তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণও আমাদের কাছে আছে, আপনার কাছেও হাজির করবো। আমরা চাই না, কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ না পায়। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
পরে টিপু বলেন, “উনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড দখল করে রাখছেন। উনি এখন চাচ্ছেন ওসমান পরিবারের হয়ে নারায়ণগঞ্জে অশান্তি তৈরি করতে। উনি প্রোগ্রামে আসলে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।”
গণসংহতি আন্দোলনের নেতা তরিকুল সুজন বলেন, “মোহাম্মদ আলীরা পূর্বে সেলিম ওসমানদের সাথে আঁতাত করে তারা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করেছে। ওসমান পরিবারের বাইরে এই নারায়ণগঞ্জে তারা কোনো কিছু বিবেচনা করতেন না। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কর্মকাণ্ড থেকে তাকে যেন বিরত রাখা হয়।
সকলের কথা শুনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “সকলের কাছে অনুরোধ, স্বাধীনতা দিবসের সম্মান যেন বজায় থাকে। এর ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবে ক্ষুন্ন না হয়। কোনো অসুন্দর কাজ যেন না হয় সেইটা আমরা চাই।”
এর আগে গত সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঈদ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। তার এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত।
এদিকে, সন্ধ্যায় মোহাম্মদ আলী ফতুল্লায় তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেন, “শামীম ওসমানের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু সেলিম ওসমানের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমি তার কাছে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই নাই। তার সাথে কথা না বলে কোনো কাজ করতে পারতাম না। তার কথা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কোনো কাজই হতো না।”