শহরে পোস্টারিং: কাদের আশ্রয়ে ‘ওসমান-শিবির’?
নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ওসমান পরিবারের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে গুম, খুন, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কারণে পেয়েছেন ‘গডফাদার’ তকমা। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেলেও তাদের অনুসারীরা শহরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
সর্বশেষ, শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আলোচিত আজমেরী ওসমানের পোস্টার সাঁটানোর ঘটনা নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এর আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানের ছবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ওসমান পরিবারের অনুসারীদের অনেকেই বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছেন। সন্ত্রাসী এই বাহিনীকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
গত সোমবার মধ্যরাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ধারণ হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে কলেজের প্রধান গেটের সামনে একটি সিএনজিতে করে আসা তিন যুবককে পোস্টার সাঁটিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায়। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাকে ও তার অনুসারীদের প্রকাশ্যে গুলি চালাতে দেখা গেছে।
এর আগে, ২৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়। এসব পোস্টারে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়।
নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টারিংয়ের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এবং পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
যদিও, এখন পর্যন্ত পুলিশ বা প্রশাসন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "পোস্টারিং করা কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।"
এর আগেও নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান।
এ সময় শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম, যুবলীগের আহমেদ কাউসার সহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। ১৯ জুলাই ডিআইটি এলাকায় নিজ বাসার ছাদে খেলার সময় ৬ বছর বয়সী রিয়া গোপ ও পোশাক শ্রমিক রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিন শামীম ওসমানের অনুসারীরা আন্দোলনকারীদের দমাতে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে নির্বিচারে গুলি চালায়।
৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও শহরে সশস্ত্র মহড়া চালায় ওসমান পরিবারের অনুসারীরা।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, আন্দোলনে গুলি চালানো ব্যক্তিদের ছবি সম্বলিত ছাত্রলীগের পোস্টারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। তারা প্রশ্ন তুলছেন, ওসমান পরিবারের সহযোগীদের আশ্রয় দিচ্ছে কারা? আওয়ামী লীগের সময় হাট, ঘাট, বাজার, ঝুট ব্যবসা, ফুটপাত, পরিবহন চাঁদাবাজিতে জড়িতরা নতুন করে এসব ব্যবসা যারা দখল ও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তারা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শেল্টারদাতাদেরও জনসম্মুখে আনার দাবি স্থানীয় লোকজনের।