খোঁচাখুঁচি করে লাভ নাই, আমরা তো পুরান মাল: রাজিব আহসান
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারায়ণগঞ্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক বিবর্তন, পরিবর্তনের এই নারায়ণগঞ্জ ভূমিকা রেখেছে এবং আগামীতেও রাখবে। কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জে মানুষের উপর গুলি চালানো ডাল-ভাতের মতো বিষয় ছিল। এই নারায়ণগঞ্জে যারা পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন তাদের অনেকের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে। মানুষকে মানুষ মনে না করে নির্বিচারে তারা গুলি করতো।’
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের উপর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী-সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এতকিছুর মধ্যেও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এই নারায়ণগঞ্জে রাজপথে ছিল, মশাল মিছিল করেছে, পুলিশের গুলির মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রাজিব বলেন, ‘আজকে তো অনেকেই অনেক কথা বলে। সারা বাংলাদেশে অনেক ধরনের নেতা আছে। রাজনৈতিক নেতা যেমন আছেন, অরাজনৈতিক নেতাও আছেন। আজকে যারা নিজেকে নেতা হিসেবে দাবি করছেন, এমনকি সরকারে যারা বসে আছেন, তাদের অনেকেই শেখ হাসিনার দালালি করেছেন। আমরা তো জানি। আমরা এখন আপনাদের কথা শুনে মানুষও হাসে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মানুষের রক্তের বিনিময়ে চব্বিশের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই স্বাধীনতার চেতনাকে এই সরকার এবং সরকারকে পরিচালনাকারী কিছু ছাত্রনেতা সেই চেতনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে, ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষের চেতনা কিন্তু সহজে তৈরি হয় না, কিন্তু নষ্ট খুব সহজে করা যায়। মানুষ তার বাকস্বাধীনতা, কাজের নিশ্চয়তা ও ভোটের অধিকার চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে সরকারের সমালোচনা করতে হয়। কিন্তু আমরা সরকারের বিরুদ্ধে না। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, এই সরকারকে সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। এবং আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু ওনারা ভুল করছেন। আমরা যখন সেই ভুল নিয়ে বলার চেষ্টা করছি, তখন ওনারা আমাদেরকে শত্রু মনে করছেন। মানুষের যখন ভালো সময় আসে তখন অনেক বন্ধু তৈরি হয়। সরকার ও সরকারের সমর্থকের এখন অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু অনেক বন্ধুরা তাদের ভুল পথে পরিচালিত করছে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা কথায় কথায় বলবে, চব্বিশের চেতনাকে বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে, চব্বিশের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীরা শহীদ হয়েছে, ওটা নাহয় বাদই দিলাম। এই চব্বিশের আন্দোলনে বিএনপিসহ ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে রক্ত দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু গত ৬ মাসেও শহীদের সঠিক সংখ্যা সরকার বলতে পারছে না।’
শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।
রাজিব আহসান বলেন, ‘আপনারা তো নতুন মানুষ। আমাদের নিয়ে খোঁচাখুঁচি করে লাভ নাই, আমরা তো পুরান মাল। আমরা আছি তো ১৭ বছর। লড়াই করেছি, জীবন দিয়েছি, আমরা আছি, আমরা সঠিক পথে থাকবো। কিন্তু আপনারা যদি সঠিক পথে না থাকেন তাহলে ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জ মহানগরের যারা নেতৃবৃন্দ আছেন, তারা ৫ (আগস্ট) তারিখের আগে যে সুনাম অর্জন করেছেন, সেটা কতটুকু ৫ তারিখের পরে রক্ষা করতে পেরেছেন, তার বিচার দল করবে এবং ইতিহাস করবে। নেতা-কর্মীরা কেউ দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবেন না। এই নারায়ণগঞ্জে কিন্তু অনেক কথা শোনা যায়।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. সাখাওয়াত ইসলাম রানার সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব মো. মমিনুর রহমান বাবু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এমজি মাসুম রাসেল, সহ-সভাপতি সালমা সুলতানা সোমা, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী ফয়সাল, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. গোলাম রহমান রাজীব, সদস্য মো. শফিক দেওয়ান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নেতৃবৃন্দ।