আইভীকে গ্রেপ্তার দাবি আজাদের, ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া নেটিজেনদের
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তিনবারের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ৷ বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নেটিজেনরা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে আজাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়৷ সেখানে মন্তব্য করেন অনেকে৷ তাদের অধিকাংশই আজাদের এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন৷
সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডকে জড়িয়ে বিএনপি নেতার অমন বক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ তারা আইভীর পক্ষ নিয়ে তার বিগত সময়ের ‘সততা, নির্ভীকতা ও দলমত নির্বিশেষে’ নেওয়া অবস্থানকে সামনে আনেন৷ এমনকি ‘গডফাদার’ তকমা পাওয়া শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে আইভীর জোড়ালো কণ্ঠস্বরও সেখানে বিবেচিত হয়েছে৷ এমনকি আইভীকে শুধু দলের জন্য নয়, তার বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য বিবেচিত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন কেউ কেউ৷
আজাদের বক্তব্যের ভিডিও’র এক কমেন্টে বাবলু হাসান নামে একজন লিখেছেন, “একজন সচেতন নাগরিক ও নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে আমি বলতে চাই, উনি (আইভী) কখনো কোনো দোসর বা কোনো দলের জন্য কাজ করেননি। তিনি কাজ করেছেন শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জবাসী এবং নারায়ণগঞ্জের জন্য। হয়তো তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন, তবে তিনি সবসময় নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের পরেই এসবের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাগুলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমি কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলছি না, আমি শুধুমাত্র সত্যি বলছি।”
ইমামুল হাসান স্বপন লিখেছেন, “ভালো মানুষ এখন মূল্যায়ন পান না বলেই, খারাপের সংখ্যা বাড়ে। নারায়ণগঞ্জের যে কোনো নেতার চাইতে ডা. আইভীর গ্রহণযোগ্যতা ও দক্ষতা অনেক বেশি।”
“আইভী আপা নারায়ণগঞ্জের স্পন্দন”, উল্লেখ করেছেন মো. সুমন৷
একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিগত সময়ে আইভী দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন বলে তুলে ধরে মো. সাখাওয়াত হোসেনের ভাষ্য, “আইভী আপা সবসময় দলমতের উর্ধ্বে থেকে জনগণের জন্য কাজ করেছেন। তিনি তো দলবাজি করেননি, তাহলে কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে?”
জান্নাত মিম নামে এক নারী লেখেন, “তার ব্যক্তিগত দুর্নীতি থাকলে তা সামনে আনা উচিত। কিন্তু শুধু দলীয় পরিচয়ে হেনস্তা করা অপরাধ। নারায়ণগঞ্জের যে কোনো উন্নয়নে তার অবদান স্পষ্ট।”
মো. আবির নামে আরেকজন লিখেছেন, “আইভীর মতো একজন সৎ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গর্ব।”
আইভীর জনপ্রিয়তার ঊদ্ধৃতি টেনে আরেকজন লিখেছেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আইভী আপাকে পরাজিত করার মতো নেতা বর্তমানে কোনো দলেই নেই।”
গোলাম হসাইন আল আমিন বলেন, “ওনার মতো মানুষকে যদি রাজনৈতিক হিংসার কারণে জেলে পাঠানো হয়, তবে রাজনীতিতে আর কোনো ভালো মানুষ আসবে না।”
“আইভী আপা নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের ওসমান পরিবারের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন”, বলেও মন্তব্য করেছেন হাবিবুর রহমান৷
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে শফিকুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “আপনি চাঁদাবাজ দখলবাজদের সামলান। নিজেরা চরিত্র পাল্টান, পরে অন্যদের নিয়ে কথা বলুন।”
আইভীকে গ্রেপ্তার করা হলে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ আসবে বলেও মনে করেন আরাফাত রহমান৷
আইভীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোকে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করে ওসমান গনি লিখেছেন, “মিথ্যা মামলা দিয়ে কিছু হবে না। তিনি জনগণের জন্য কাজ করেছেন।”
নজরুল ইসলাম আজাদের বক্তব্যের বিপরীতে মেয়র আইভী সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জবাসীর বড় অংশ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করেন, তিনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান জনপ্রতিনিধি, যিনি দলের উর্ধ্বে উঠে জনগণের জন্য কাজ করেছেন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এমন একজন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা উচিত নয়।