কার্যালয় ঘেরাও, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের আশ্বাস সিভিল সার্জনের
নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার প্রতিবাদে ও হয়রানিমুক্ত শতভাগ সেবা নিশ্চিতের দাবিতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ঘেরাও করেছে গণসংহতি আন্দোলন। এ সময় নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় চাষাঢ়া শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় উদ্দেশ্যে মিছিল করে গণসংহতি আন্দোলন জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা। সাড়ে ১১টায় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
এ সময় তারা সিভিল সার্জনের কাছে ৯ দফা দাবি পেশ করে। দাবিগুলো হলো, অব্যবস্থাপনা ও হয়রানিমুক্ত শতভাগ সেবা নিশ্চিত, পর্যাপ্ত ঔষধের মজুদ ও সরবরাহ রাখা, রোগ নির্ণয়ের সকল প্রকার টেস্ট হাসপাতালগুলোতে করার ব্যবস্থা করা, ডাক্তার (বেসরকারি খাতের) ফি এবং টেস্ট ফি কমিয়ে আনাতে হবে, হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বিশেজ্ঞ মেডিকেল অফিসার নিয়োগ, অবকাঠামো ও মেডিক্যাল যন্ত্রাংশের ঘাটতি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এম্বুলেন্স সার্ভিস সহজ করা, উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোসহ জেলা সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি, ডায়াগনস্টিক, প্যাথলজি ও ক্লিনিকগুলোর দৌরাত্ম মুক্ত করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জরুরি অগ্নি নিরাপত্তাসহ পুরো হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শতভাগ কমপ্লায়ান্স নিশ্চিত করা।
গণসংহতির নেতারা বলেন, নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণ লক্ষ্য করছি। যার উদাহরণ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতা। যার খেসারত আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী দিচ্ছি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল দুটিতে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। কেবলমাত্র ডেঙ্গু নয়, যেকোন সাধারণ চিকিৎসায় হাসপাতাল দুটি নারায়ণগঞ্জবাসীর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠার কথা কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি, বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে সুবিধা দিতে সরকারি হাসপাতালগুলোকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই পেছন থেকে টেনে ধরা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা হাসপাতাল এই দশা থেকে বেরিয়ে আসবে। এবং আপনি তার জন্য উদ্যোগী এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
এই সময় নিজের কক্ষ থেকে নেমে আসেন সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান। পরে তিনি আন্দোলনকারীদের সামনে বক্তব্য রাখেন।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলে ৪০ লাখ। প্রায় ৩ গুণ বেশি লোক বসবাস করছে। ৩০০ শয্যা হাসপাতাল নাম মাত্র, সেখানে ৩০০ শয্যা নাই। সেখানে বিদ্যমান আছে ১৫০ শয্যা। ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ১০০ শয্যা। এর মধ্যেই সকল রোগীদের আমাদের একোমোডেট করতে হয়। আমরা একেবারে কোন কিছু করিনি এটা সঠিক না। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা চলছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণসংহতি আন্দোলন এখানে আসতে পেরেছেন, আগে এটা হয়তো আসতে পারতেন না। কেউ না কেউ বাধা দিতো।’
‘বিগত সরকার ডেঙ্গু নিয়ে কোন দীর্ঘ পরিকল্পনা করেনি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘করোনার প্রতি যে দৃষ্টি দিয়েছে তারা, সে পরিমান দৃষ্টি ডেঙ্গুর প্রতি দেয় নাই। অথচ করোনা চলে গেছে, কিন্তু ডেঙ্গু বছরকে বছর রয়ে গেছে। সরকার আমাদের যে পরিমাণ বরাদ্ধ দেয় আমরা সেটুকু কাজই করি। গর্ভমেন্ট বলেছে ৫০টাকা করে হাসপাতালে পরীক্ষা হবে; আমরা তাই করছি। যেখানে বাহিরে ২ হাজার টাকা লাগে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, জেলা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন আলম, নারী সংহতির আহ্বায়ক নাজমা বেগম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, ৭ নং ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান, ১৮ নং ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক শুক্কুর মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।