ওসমান পরিবারের দাপটে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল: নুরুল হক
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেছেন,“ওসমান পরিবারের দাপটে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল৷ গত ১৫ বছরে এ নারায়ণগঞ্জে যা হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত অধ্যায়৷ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে ওসমান পরিবারের লোকেরা হত্যা করেছিল৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে সেভেন মার্ডারের ঘটনা ঘটিয়েছিল৷ তারা খেলা হবে হুঙ্কার দিয়েছিল৷ কিন্তু খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে৷”
শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কের উপর দলটির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের ত্রাসের রাজত্বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ চালিয়েছিল ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি৷ ত্বকী হত্যা শুধু একটি হত্যাকান্ড নয়, এটি নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি লড়াই ও সংগ্রামের প্রেরণা ছিল৷”
বিএনপির তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী ‘অতি উৎসাহী হয়ে বাড়াবাড়ি করছে’ বলে অভিযোগ করে তাদের উদ্যেশ্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, “সেনা শাসন ডাইকা আইনেন না৷ কোথাকার আগুন কোথায় যায়, কোন ঘটনায় কী হয়, সেটি কিন্তু বলা যায় না৷ এই কথা পাবলিকালি আমরা বলতে চাই না৷ কিন্তু বলা ছাড়া তো গতি নাই৷”
আওয়ামী লীগ শাসনের পতন হলেও ‘দখলদারি’ বন্ধ হয়নি ‘শুধু হাতবদল হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি৷
তিনি বলেন, “কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বাড়াবাড়ি কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি৷ পুরোনো ব্যর্থতার জঞ্জাল অপসারণে নতুন রাজনীতির কোনো বিকল্প নাই৷'
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে নুরুল বলেন, “বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন৷ বিশেষ করে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বিএনপির সাথে আমাদের রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রামের একটা সম্পর্ক৷ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু বিএনপির তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীরা অতিউৎসাহী হয়ে উঠেছে৷ এ যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিল তাদের সাথেও তারা ঝামেলার সৃষ্টি করছে৷”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় করি নাই, সুতরাং আমাদের ভয় দেখাবেন না৷ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিবেন না৷ কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভেবে থাকেন, আমরা একাই একশো, ক্ষমতায় চলে এসেছি৷ এত সোজা না, ক্ষমতা বহু দূরে৷”
রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকাকে ‘যত সময় লাগে দেবেন’ বলেও জানান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি৷
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে৷ দেশের যা পরিস্থিতি তাতে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে এবং নির্বাচনে যেতে হয়তো তাদের দুই বছরের মতো সময় লাগতে পারে৷ আমরা বলেছি, দুই বছর, এক বছর কিংবা তিন বছর লাগুক রাষ্ট্র সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশের গন্তব্যে যেতে যে কয় বছর লাগে সে কয় বছর সময় দেবো৷’
‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ, অত্যাচার, নির্যাতন আমরা ১৬ বছর সহ্য করেছি৷ কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে দুই-এক বছর নিলে আমরা সহ্য করতে পারবো’, যোগ করেন এ রাজনীতিক৷
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
নুরুল বলেন, ‘জনরোষ ও জনক্ষোভ যেন তাদের বিরুদ্ধে তৈরি না হয়৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারলে, মানুষের ভোগান্তি নিরসন করতে না পারলে জনগণও ফুঁসে উঠতে পারে৷’
সকল দল ও মানুষকে সাথে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান এ নেতা৷
তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সে পরিবর্তনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তারুণ্যের রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ কাজ করছে৷”
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদের সভাপতিত্বে দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও এ সময় বক্তব্য রাখেন৷