১৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

আলী রেজা রিপনকে নিয়ে সাংবাদিক রাকিব উল হাসানের স্মৃতিকথা 

আলী রেজা রিপনকে নিয়ে সাংবাদিক রাকিব উল হাসানের স্মৃতিকথা 

পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার ছেলে ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন, আল্লাহ, রাসূল, পাক পাঞ্জাতন, আহলে বাইত, ওলী প্রেমী নকশবন্দিয়া তরিকার গোলাম নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মুত্তাকী হওয়ার পথ অনুসরণ করতেন।

ধর্মীয় এসব বিষয়ে আলী রেজা রিপন মনের দিক থেকে যতটা ফানা ফিল্লাহ ছিলেন, প্রকাশ্যে তা প্রকাশ করতেন খুব কম। তবে তরিকার খেদমতে গুরুদায়িত্ব পালনে সে ছিল একনিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে তরিকার খেদমতে আলী আহাম্মদ চুনকা, আমিনুল ইসলাম, জামির আহমেদ জমুর নেতৃত্ব ছিল দেশব্যাপী সমাদৃত। তাদের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বে তরিকার সিলসিলা বা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আলী রেজা রিপন ছিলেন একজন সুযোগ্য উত্তরসূরি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অনেক বড় বড় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে। আলী রেজা রিপন জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তরিকার কার্যক্রম পরিচালনা করে সফল হয়েছেন।

ওরশ মোবারকের প্রস্তুতি, কুল, ফাতেহা পাঠ বা তরিকার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে একদিকে যেমন কঠোর ছিলেন, অন্যদিকে কোমল আচরণ দিয়ে সহযোগীদের নিয়ে সে কাজগুলো যথাসময়ে প্রস্তুত করতেন। এসব কাজ করতে গিয়ে কখনও কারো সাথে কঠোর হলেও পরবর্তীতে হাসিমুখে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতেন।

কিছু স্মরণীয় ঘটনা
বিগত সময়ে বাবুরাইল ঐতিহ্যবাহী সাত দিনব্যাপী খাজা গরিবে নেওয়াজের ওরশ মোবারকের প্রস্তুতি চলছে। এর আগেই রিপন তার অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে ভারতের একটি হসপিটালে অবস্থান করছে। তখন আলী রেজা রিপন এক পীর ভাইকে ভারত থেকে ভিডিও কল করে বলেন, “ভাই, বাবুরাইলে ওরশের প্রস্তুতি হচ্ছে, আর আমি ভারতের হসপিটালে। মনটা খাজার ওরশে পড়ে আছে। ভাই, ভিডিও কলে খাজার ওরশের গেইট, লাইট, প্রস্তুতি আমাকে একটু দেখাও।” পরে কথা মতো ভিডিও কলে ১৫/২০ মিনিট ওরশের প্রস্তুতি, গেইট, লাইটিং দেখে বলেন, “ভাই, এখন মনটা একটু হালকা লাগছে।”
খাজার ওরশে আখেরি কুলের আগের রাত, সারা রাত জেগে থেকে নেওয়াজ রান্নার কার্যক্রম পরিচালনা করে টানা পরদিন দুপুর পর্যন্ত নিজে বসে থেকে নেওয়াজ বিতরণ করতেন। ওরশে নজরানাদাতা ও সম্পৃক্ত পীরভাই, এলাকাবাসী—সবাইকে নেওয়াজ বিতরণ নিশ্চিত করতেন।
পীর-মুর্শিদদের বিষয়ে বলতে গেলে এক কথায় আলী রেজা রিপন ছিল পীর-মুর্শিদের গোলাম। বাবুরাইল খাজার ওরশে সাতদিন পীরজাদারা অবস্থান করতেন। প্রথম দিন ওরশ উদ্বোধনের দিন পীরজাদাদের বরণ করতে নানা রকম প্রস্তুতি নেওয়া হতো, এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পীরজাদাদের মর্যাদা দিয়ে বরণ করা হতো।

নানা কর্মসূচি, মাল্যদান, আতশবাজি, ২ নম্বর বাবুরাইল মোড় থেকে খানকা পর্যন্ত সড়কে দু'পাশে দাঁড়িয়ে তরিকার আশেকান, ভক্তবৃন্দ, মুরিদান ও এলাকাবাসী একত্রে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে পীরজাদাদের বরণ করা হতো। এসব কাজে যেন কোনও রকম ভুলত্রুটি না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতেন রিপন। ফাতেহা শেষে সারা রাত জেগে হুজুররা বাংলা বয়াতি গান গেয়ে ভোরে ঢাকা নবাব বাড়ি যেতেন। এ সময় রাত জেগে টানা সাতদিন হুজুরদের আপ্যায়ন, দেখভাল—সব দিকে তার সজাগ দৃষ্টি ছিল। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে পীর-মুর্শিদের অনুমতির জন্য সে বিষয়ে তাদের অবহিত করে মুচকি হাসি দিয়ে, অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

পীরজাদাদের কাছে যতক্ষণ থাকতেন, আলী রেজা রিপনের মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকতো।

সর্বপরি, আলী রেজা রিপন একটু চাপা স্বভাবের ছিল। পীর-মুর্শিদের প্রতি সে যতটা পাগল, ফানাহ ফিল্লাহ ছিল, তা প্রকাশ করতেন তুলনামূলক অনেক কম।
বেশিরভাগ সময় নীরবতায় সময় কাটাতেন।

তরিকার পীরভাইদের চোখে রিপন
তরিকাপন্থি একজন পীরের মুরিদান মূলত আল্লাহ, রাসূল ও পীর-মুর্শিদের চরণে নিজেকে সোপর্দ করে। তখন পীরের ইচ্ছাই মুরিদানের ইচ্ছা হয়। অর্থাৎ পীরকে সন্তুষ্ট করতে তার নির্দেশমতো সকল কার্যক্রম করে মুরিদ।
কামের পীরের হাত ধরেই আল্লাহ, রাসূলকে পাওয়া যায়। আলী রেজা রিপনের জীবনের মূল লক্ষ্যই ছিল এটি।
‘মুরিদ’ শব্দটি আরবি থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “ইচ্ছা করা” বা “আকাঙ্ক্ষা করা”। ইসলামের মারিফতি ধারায় মুরিদ হলো সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা এবং একটি পীর বা মুর্শিদের সান্নিধ্যে পথচলা শুরু করেন। মুরিদ সাধারণত সুফি ধারায় একজন মুর্শিদের অনুসরণে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকে বেছে নেন।
আধ্যাত্মিক নির্দেশকের গুরুত্ব নির্দেশ করে, মুরিদ পীরের নির্দেশনায় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য নিজেকে নিবেদন করেন।

মারিফতের আলোকে মুরিদের ব্যাখ্যা
আত্মশুদ্ধি এবং ইচ্ছা:
‘মুরিদ’ শব্দের মূল অর্থই হলো ইচ্ছা। একজন মুরিদের মধ্যে আল্লাহর প্রেমে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা থাকতে হয়। তিনি তার পীরের নির্দেশ অনুসারে নিজের নফস (আত্মা) পরিশুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করেন।

পীরের প্রতি আনুগত্য
মুরিদ তার মুর্শিদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও ভক্তি প্রদর্শন করে। পীর তার আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক, যিনি তাকে শিরক থেকে মুক্তি এবং তাওহিদের প্রকৃত জ্ঞান দান করেন।

আল্লাহর প্রতি নিবেদন:
মারিফতের শিক্ষা অনুযায়ী, মুরিদ ধীরে ধীরে নিজের সকল ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার সাথে একীভূত করেন। এই অবস্থাকে ‘ফানা ফি আল্লাহ’ (আল্লাহতে বিলীন হওয়া) বলা হয়।

একজন মুরিদের বৈশিষ্ট্য:
সৎ চরিত্র: তিনি সত্য কথা বলেন, অন্যায় থেকে দূরে থাকেন এবং মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।
তাওবা: তিনি তার পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন।
আধ্যাত্মিক ধৈর্য: মুরিদের জীবনে ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।

মুরিদ মূলত সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর ভালোবাসা এবং নৈকট্য লাভের জন্য নিজের সমস্ত ইচ্ছা ত্যাগ করে একজন আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের সান্নিধ্যে পথ চলেন। এটি কেবল আল্লাহর দিকে আত্মসমর্পণেরই নাম নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করে পরিপূর্ণ ইমানদার হন।

মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন পারিবারিকভাবে এসব শিক্ষা অর্জন করে বেড়ে উঠেছেন। তরিকার অভিজ্ঞ মুরিদান মরহুম আলহাজ্ব সাহাবুল হাজ্জীসহ আরও অনেকের কাছ থেকে তরিকার শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি তরিকার বিষয়ে জানতে খুব আগ্রহী ছিলেন। জানার আগ্রহে ছোট ছোট প্রশ্ন নিয়ে অভিজ্ঞ পীর ভাইদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করতেন।

রিপন দীর্ঘ সময় তরিকার খেদমতে কাটিয়েছেন। তার মধ্যে একজন মুরিদের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে, তার সবটুকুই ছিল।
এবার নিজের বাড়িতে খানকা—‘দারুল ইশক হযরত শাহ সৈয়দ খাঁজা নাজমুল হাসান (রহ.) খানকা শরীফে’ তরিকার সকল কার্যক্রমে আলী রেজা রিপন একজন দায়িত্বশীল (তরিকার ভাষায় গোলাম) ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে পাক পাঞ্জাতনের ফাতেহা, শেরে খোদা মাওলা আলী (রা. আ.)-এর ২০ রমজান ওফাত দিবসে ফাতেহা ও ইফতার মাহফিল, মহররমের ১০ দিন শহীদে কারবালার ফাতেহা, বড় পীর দস্তগীর আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম, প্রতি আরবি মাসের ২৪ তারিখ খাঁজা নাজমুল হাসান (রহ.)-এর নামে ফাতেহা, আলী আহাম্মদ চুনকা চিশতী (রহ.)-এর বার্ষিক ওরশ মোবারক—এসব তরিকার কার্যক্রম পালনে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।

প্রতিটি ওরশ ও ফাতেহা কার্যক্রমের প্রস্তুতিতে কয়েকদিন আগেই তার মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করত। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারতেন, ততক্ষণ সে অবস্থায় সময় কাটাতেন। এসব কাজ সম্পাদন করতে একঝাঁক নিবেদিত তরুণ ছিল। আলী রেজা রিপনকে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সমীহ করতো। তারা সবসময় প্রস্তুত থাকতো আলী রেজা রিপনের নির্দেশের জন্য। কোনো কিছু বলা হলে তা দ্রুত সময়ে সম্পূর্ণ করা হতো।

রিপন তাদের অত্যন্ত মহব্বত করতেন। তাদের সকলকে ভালোবাসতেন, দেখা হলেই হাসিমুখে ডাক দিয়ে কাছে টানতেন। পরিবারের খোঁজখবর নিতেন। তারা সবাই আলী রেজা রিপনকেও মহব্বত করতেন, ভালোবাসতেন। যখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না, তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে প্রতিটি পীর ভাইয়ের বাড়িতে যেতেন দুই ভাই—রিপন ও উজ্জ্বল। একটি কার্ড দিয়ে বিনয়ের সাথে পীর ভাইদের দাওয়াত করতেন।

দীর্ঘদিন এ ধারাবাহিকতা ছিল।

পরবর্তীতে এসব অনুষ্ঠানে সবাইকে মোবাইল ফোনে দাওয়াত করতেন।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের আদর-আপ্যায়ন দেখভাল করতেন অত্যন্ত যত্নে। অনুষ্ঠানে আগত নিমন্ত্রিত অতিথি, তরিকার আশেকান ভক্তবৃন্দ, পীর ভাই-বোনদের সাথে অত্যন্ত নম্রতায় সালাম-আদাব দিয়ে কুশল বিনিময় করতেন। তার প্রয়ানের সর্বশেষ ২০ রমজান মাওলা আলীর ওফাত দিবসে ইফতার মাহফিলে অতিথিদের আপ্যায়ন এখনও চোখে ভাসে। মেয়র আইভীর আমন্ত্রিত গণ্যমান্য অতিথিরা বাড়ির নিচতলায় বসে ইফতার করছেন। এসময় আলী রেজা রিপন অতিথিদের জন্য গরম গরম চপ, বেগুনি, পিয়াজু নিজ হাতে এনে প্রতিটি অতিথির প্লেটে তুলে দিচ্ছেন এবং সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন—কোনো রকম অসুবিধা হচ্ছে কিনা।

আলী রেজা রিপনের এমন গুণের উদাহরণ লিখে শেষ করা যাবে না।

প্রতি বছর তরিকার এত অনুষ্ঠান ও ওরশ সম্পন্ন করেও আলী রেজা রিপনকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখা যায়নি, বরং তার মধ্যে এক ধরনের উৎফুল্লতা বিরাজ করত।

তরিকার খেদমত করে পূর্ণতৃপ্ত হতেন তিনি। সত্যিকারের আল্লাহ-রসূলের আশেক, পীর-মুর্শিদের গোলাম—তাদের জীবন-মরণে অনেক ঘটনার ঘটে।

আলী রেজা রিপন রোজা মুখে সকালে মৃত্যুবরণ করেন, আর মাগরিবের আজানের সময় তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। একজন প্রকৃত মুত্তাকীকে মহান আল্লাহ দুনিয়াবাসীর কাছে এভাবেই সম্মানিত করেন। আল-কোরআনে বর্ণিত আছে—একজন বান্দা যে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন, রোজ হাশরের ময়দানে তিনি সে অবস্থায়ই উদিত হবেন। “সুবহান আল্লাহ!” মহান আল্লাহ রসূলের সামনে আলী রেজা রিপন রোজা মুখে দাঁড়াবেন—এটা কত বড় সম্মান, কত বড় মর্যাদা! এমন ভাগ্য ক’জনের হয়?

এবার নকশবন্দিয়া তরিকার আস্তানাপাক, ঢাকা নবাব বাড়ি খানকা এ দারুল ইশক দরবারে আলী রেজা রিপনের কার্যক্রম নিয়ে কিছু আলোচনা।

শব-ই-মেরাজে মিলাদ শরীফ, শব-ই-বরাতের মিলাদ, প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার পাক পাঞ্জাতনের ফাতেহা, ২০ রমজান শেরে খোদা মাওলা আলী (রঃ আঃ)-এর ওফাত দিবসে ফাতেহা।

মহররমের ১-১০ তারিখ মাওলা ইমাম হুসাইন (রঃ আঃ), শহীদে কারবালার স্মরণে ফাতেহা পাঠ।

মাহবুবে সুবহানী কুতুবে রাব্বানী পীরানে পীর গোলামে দস্তগীর বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম।

আরবি মাসের ৩-৪ রবিউল আওয়াল খানকায়ে দারুল ইশকের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়দ খাঁজা নাজম-উদ্দিন আহম্মেদ নকশবন্দ আবুল উলাই (কুঃ সিঃ রঃ আঃ)-এর ওরশ মোবারক।

আরবি মাসের ২৪-২৫ সফর—এলাহি বাহুরমতে পীরে কামেল, ময়দানে মোহাব্বত কুতুবে আফতাব, হযরত শাহ সৈয়দ খাঁজা নাজমুল হাসান নকশবন্দ আবুল উলাই (রহঃ)-এর ওরশ মোবারক।

আরবি ১৫-১৬ শাবান—এলাহি বাহুরমতে তাজদারে আউলিয়া, কুতুবে ওয়াক্ত হযরত সৈয়্যদ খাঁজা দায়েম হাসান নকশবন্দ আবুল উলাই (রহঃ)-এর ওরশ মোবারক।

সহ সকল তরিকার কার্যক্রমে আলী রেজা রিপন নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। তিনি বর্তমান গদ্দীনশিন পীরজাদাদের অত্যন্ত সম্মান ও ভালোবাসতেন। পীরজাদারাও তাকে অত্যন্ত মহব্বত করতেন।

আলী রেজা রিপন দরবার শরীফে গিয়ে প্রথমেই মাজার শরীফ জিয়ারত করতেন। পরে অন্দরমহলে গিয়ে পীরজাদাদের কদমবুচি করে ওরশ মোবারকের কার্যক্রমে শরিক হতেন। হুজুররা কোনো আদেশ-নির্দেশ দিলে তা গুরুদায়িত্ব হিসেবে দ্রুত পালন করতেন। নবাব বাড়িতে অন্দরমহলের কাজ শেষে খানকা শরীফে এসে সবার পেছনে নীরব ভূমিকায় অবস্থান করতেন। সকল পীর ভাইদের সাথে নম্রতায় কুশল বিনিময় করতেন।

পরে ফাতেহা শুরু হলে প্রথম কাতারে চলে আসতেন। হুজুরদের কদমবুচি করে মিলতেন। অনেক সময় আল্লাহ-রসূল-পীর-মুর্শিদের নামে (কালাম পাঠ) কাওয়ালি শুনে ফানাফিল্লাহ হয়ে পীর ভাইদের সাথে কাফিয়াত করতেন। মজলিশে সামা শুরু হলে একেবারে নীরব হয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে শুনতেন। অনেক সময় অশ্রুসজল হয়ে পড়তেন।

তিনি হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়দ খাঁজা নাজম-উদ্দিন আহম্মেদ নকশবন্দ আবুল উলাই (কুঃ সিঃ রঃ আঃ)-এর নিজের লেখা বেশ কিছু কালাম অত্যন্ত পছন্দ করতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—“কাসরে জান্নাত না বুলান, কাসরে জান্নাত না বুলান, মুঝে ইয়ারে মুঝে ইয়ারে, বালাম।”

সব দরবারে মজলিশে সামা শেষ হওয়ার আগে নাদিম কাওয়ালকে এ কালামটি গাইতে অনুরোধ করতেন। এবং নাদিম কাওয়াল গাইতে শুরু করলে ধ্যানমগ্ন হয়ে রুহানি জগতে ফানাফিল্লাহ হয়ে পড়তেন। এ বিষয়টি উপস্থিত অনেক পীর ভাই লক্ষ করেছেন।

আলী রেজা রিপন প্রায় সময় একাকিত্বে আল্লাহ-রসূল-পীর-মুর্শিদের নামে (কালাম পাঠ) কাওয়ালি শুনতেন।

তিনি জীবদ্দশায় নিজেকে সবসময় পাক পাঞ্জাতনের গোলাম মনে করতেন। বলতে খুব পছন্দ করতেন—“আমি তো পাক পাঞ্জাতনের গোলাম এবং ইবনে গোলাম হু।” অর্থাৎ, “আমার বাবাও গোলাম ছিল, আমিও গোলাম। মেঁ তো পাক পাঞ্জাতন কা গোলাম হু, গোলাম ইবনে গোলাম হু।”

তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সামর্থ্য অনুযায়ী বিলাসিতা করতেন না। পাক পাঞ্জাতন, দয়াল রসূল, মাওলা আলী, মা ফাতিমা, ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইনের জীবনযাপনের পথ অনুসরণ করতেন।

নিজ বাড়িতে মহররমের দশ দিন ইমাম হুসাইন শহীদে কারবালার স্মরণে ফাতেহার সময় তার সুরত ও শোকাহত চেহারার দিকে তাকালে কারবালার ময়দানের হৃদয়বিদারক ঘটনা উপলব্ধি হতো। আলী রেজা রিপন পাক পাঞ্জাতনের কতটা পাগল ছিলেন, তার সেই শোকাহত সুরতই সাক্ষী হয়ে আছে।

আলী রেজা রিপন এতটাই সৌভাগ্যবান, তার নাম বারো ইমামের একজন—ইমাম আলী রেজা’র সাথে মিলিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহান রাব্বুল আলামিন, রহমাতুল্লিল আলামিন, পাক পাঞ্জাতন আহলে বাইত, পীর-মুর্শিদের গোলাম মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন ভাইকে আল্লাহ কবুল করুন। তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।

রাকিব উল হাসান
সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জের খবর ডটকম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়