১৫ এপ্রিল ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১২ এপ্রিল ২০২৫

মনের মানুষের সনে! স্মরণের বালুকা বেলায় চরণ চিহৃ আঁকি

মনের মানুষের সনে! স্মরণের বালুকা বেলায় চরণ চিহৃ আঁকি

অনেক কিছু শুরু করার জন্য চেষ্টাও হয়, কিন্তু করা যায় না। আবার অনেক কিছু এমনিতেই হতে থাকে। আজকের লেখাও তেমনই। কিভাবে যে শুরু হবে তা বোধে আসছিল না। আমাদের অতিপরিচিত ও আপনজন মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন গত সোমবার ৭ এপ্রিল ইহকাল ত্যাগ করে পরকালের জন্য যাত্রা করেছেন পরম করুণাময়ের আহ্বানে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সোমবার সকালে পরিচিতজনদের মোবাইলে অসংখ্য ফোন ও মেসেজ আসতে থাকে বিষয়টি নিশ্চিত হবার জন্য। সুস্থ সবল মানুষের মৃত্যুটা অনেকের কাছেই সত্য মনে হচ্ছিল না। মরহুমকে শেষ দেখার জন্য এসে প্রবীণ সাংবাদিক জাফর আহমেদ বলেন, "রিপনের মরদেহ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।" তাঁকে দেখতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে যান চুনকা কুটিরে। দলমত নির্বিশেষে সকল নেতৃবৃন্দকে দেখা যায় মরদেহের পাশে। কর্মরত সাংবাদিকরাও আসেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি সাংবাদিক এসোসিয়েশন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়ে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে। জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বসহ সংবাদটি প্রচার করে।

অত্যন্ত বিনয়ী ও নিরহংকারী, বিবেক সচেতন ও বুদ্ধিমান এবং মিশুক ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে মিশতেন। সকলের সাথে চায়ের কাপ ভাগাভাগি করতেন। সকল ধর্মের অনুষ্ঠানে যেতেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ ঘৃণা পোষণ করতে দেখা যায়নি, অন্যায়, অপরাধ ও পাপকাজ ব্যতীত।

ফেসবুক জুড়ে রিপনের ছবি ও মৃত্যুর শোকগাথা ছিল। ফারুক আহমেদ রিপন বলেন, "অসুস্থতার কারণে জানাজায় আসতে না পারায় মনটা খুব খারাপ লাগছে। খুব ভাল মনের মানুষ ছিল রিপন। ছিল না কোন অহংকার। রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। বন্ধু সুলভ আচরণ আর অমায়িক ব্যবহার সকলের কাছে ছিল প্রশংসনীয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দেখিনি ওকে। পারলে মানুষের উপকার করতো। রিপন কারো উপকার করতে না পারলেও ক্ষতি করেনি। দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতালা রিপনকে জান্নাতবাসী করুন। প্রিয় রিপনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা। আমিন।"

অসীম রায় লিখেছেন, "বন্ধু, তোমাকে মানুষ এতো ভালোবাসে—নিশ্চয় তুমি পরকালে সম্মানিত স্থান পেয়েছো।" প্রায় অভিন্নভাবে লিখেছেন তাহের হোসেন। বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁরাও লেখেন মৃত্যুতে কষ্টের অনুভূতি।

সোমবার হতে ফেসবুকে হাজার হাজার পোস্ট, মন্তব্য ও ছবি দেখা যাচ্ছে। যার যার মতো করে অনুভূতিটা প্রকাশ করছেন। অনির্বাচিত এবং অনেকটা আড়াল করে চলা কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এতো পোস্ট প্রতিক্রিয়া আগে দেখা যায়নি নারায়ণগঞ্জে।

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁর ভালোবাসার রূপ ও পরিধি বদলায়। কৈশোর ও তারুণ্যের ভালোলাগা-ভালোবাসার ধরনের আর পরিণত বয়সের মধ্যে তফাৎ যোজন। বয়স বাড়লে মনের মানুষের সংখ্যা বাড়ে। তখন পরিবারের সদস্য ছাড়াও এমন কিছু লোকজনের সাথে মিলন ঘটে জীবনে, যাঁরা ভালোবাসার পাত্র বনে যান। রিপনও তেমনই একজন। সেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটতেই বুঝি সবাই ছুটে যান চুনকা কুটিরে। আর যাঁরা দূরে ও সঙ্গত কারণে আসতে পারেননি তাঁরাও আহাজারি আর আফসোস করেন, ফেসবুকে, মোবাইলে কল করে, মেসেজ দিয়ে।

লালন সাঁই সারা জীবন মনের মানুষ খুঁজতে খুঁজতে গেয়ে ফেলেছিলেন, 'মিলন হয় না কাপাল গুনে আমার মনের মানুষেরও সনে।' আমরা জানি না, রিপন কি নিরবে নিভৃতে লালনের গানটা গাইতেন কি না। অথবা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে কেবল ভালোবাসার মানুষের সংখ্যাই বৃদ্ধি করে গেছেন কি না। 

'আমাদের জন্য মনের মানুষের সংজ্ঞাটা এমন যে, প্রিয় একজন ছাড়াও জীবনে অনেকের আগমন ঘটে। রিপনের জন্যও এটাই প্রযোজ্য। তাঁর বাবা, মা, স্ত্রীসহ আরও অনেকে পরকালে আছেন। বিধাতা সম্ভবত তাঁদের সঙ্গে মিলন ঘটাতে রিপনকে নিয়ে গেছেন।

দাফন কাজের সময় দেখা হতেই আবু সাঈদ কাদেরী বললেন, মানুষ মারা গেলে ভালো-মন্দ সব আলোচনা হয়। কিন্তু ওনার নামে ভালো ব্যতীত খারাপ কেউ বলছেন না। জনপ্রতিনিধির পরিবারের সদস্যদের আচরণ এই দেশে যেমন হয়, রিপন ছিলেন উল্টো। অনেক সময় আমি না দেখলেও তিনি দেখে ডাক দিতেন। কোন মান-গরিমা ছিল না। শেষে বললেন, এখন তো আড্ডা শেষ আপনাদের, আর কার সঙ্গে গভীর আড্ডা জমবে? কে সকল শ্রেণির বন্ধুদের একসাথে ডেকে এনে বসাবে?'

'রাসেলপার্ক, পালপাড়া, দুই নম্বর বাবুরাইল, বোস কেবিন, ফান ক্লাব, পাগলার মদিনা হোটেলসহ বহু স্থানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা আর ভোজন মনকে দোলা দেয়। আর কি হবে বন্ধুদের সেই মিলনমেলা?'

ঢাকা হতে মো. আলম এসেছিলেন জানাজায় অংশ নিতে। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যে রকম কৌতুক করতেন, মনে হয় না আর কারো সঙ্গে এ রকম মিশতেন। এভাবে সমীর রায় বললেন, কেমনে বিশ্বাস করি, রাত সাড়ে এগারোটায় মামারে বাড়ির গেটে দিয়া গেলাম। আমার সঙ্গে যত সময় কাটিয়েছেন, তা মনে হয় না কারো সঙ্গে এমন দিয়েছেন।

আলী রেজা রিপনের বন্ধু ও পরিচিত জন মো. মুকুল, টনি, ফারুক, ভূঁইয়া, মিঠু, রুহুল, স্বপন, হুদা বাবু, জাকির, জুয়েল, সাঈদসহ গোটা নারায়ণগঞ্জের প্রায় হাজার জন বিড়বিড় করে একই কথা বলেছেন মরদেহ দেখতে এসে। তাঁদের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়টা। রিপন যেনো সকলের মনের মানুষ ছিলেন।

'রিপনের এই চলে যাওয়া আমাদের দৃস্টিতে অকাল হলেও আসলে তা নয়। নির্ধারিত সময়ে তাঁর ডাক এসেছে। যাঁর জন্য যখন নির্ধারিত সময়, সেটা রদ করার ক্ষমতা যেমন কারো নাই। কষ্ট হলেও সত্য, জননেতা আলী আহমেদ চুনকার মৃত্যুর পর বিশাল শূণ্যতা দেখা দেয়। সংগঠন, শহর ও পরিবার অভিভাবকহীন মনে হয়েছিল। তবে আল্লাহ যা নেন, তার চাইতে উত্তম কিছু স্থলাভিসিক্ত করেন। আমরা দেখতে পাই, চুনকা সাহেবের মেয়ে ডাক্তার আইভি নগরীর দায়িত্ব নিয়ে প্রভূত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এবং অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মূর্তপ্রতীক হয়ে দাঁড়ান। মহান আল্লাহ নিশ্চয় রিপনের চাইতেও উত্তম কাউকে এই পরিবার হতেই দাঁড় করিয়ে দিবেন বলে বিশ্বাস করি।'

'তাঁকে শেষ বিদায়ের সময় জানাজায় দাঁড়িয়ে ছোট ভাই আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল বলেন, আমরা দুটি ভাই ছিলাম। ছোট হতে এক সাথে খেলাধুলা করেছি। বড় ভাই, পাকপাঞ্জাতন ও আহলে বয়াতের গোলাম ছিলেন। প্রতিদিন বাড়িতে খানকা শরীফে সন্ধ্যায় আগরবাতি দিতেন। বাবা ছিলেন নকশাবন্দ তরিকার খলিফা। বাবাকে অনুসরণ করতেন। বাবুরাইল আজমেরি গলিতে ওরশের যাবতীয় উদ্যোগ নিতেন বড় ভাই। তিনি বহু ভালো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন।
'------- আমার ভাই যদি কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন আপনারা আল্লাহ'র ওয়াস্তে মাফ করে দিয়েন।'
আলী রেজা উজ্জলের হৃদয় নিংড়ানো ও আহাজারি ভরা কথা গুলো উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের চোখে পানি জমে ছলছল করে। কারো গড়িয়ে পড়ে।

'জানা যায়, আলী রেজা রিপন বিভিন্ন সামাজিক ক্রীড়া সাংস্কৃতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলেন। এলাকার মসজিদ কমিটির সভাপতি আহাম্মদ আলী বেপারি জানাজার আগে বলেন, রিপন এই মসজিদ নির্মাণে কাজ করেছেন। তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।
জানাগেছে, মিন্নত আলী শাহ মাজার শরীফের মসজিদ নির্মাণেও কাজ করেছেন।'

(পেছনের দিনগুলি)
২০০২ সালের কথা। একদিন বিকালে মোবাইলে একটেল নাম্বার হতে কল এলে অপরপ্রান্ত হতে জানান, আমি রিপন, শুক্রবার বিকালে আমাদের পুরান বাড়িতে থাকিস। সেই হতে সোমবার পর্যন্ত পথ চলা। তবে স্কুলর জীবনেও ছিল বন্ধুত্বে।) বাদ আছর সেখানে আমি ও সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত হই। দেখেই বলেন, খুব খুশি হয়েছি। বলছিলো, শোন্ আপায় (ডা:আইভি) ইলেকশন করবেন। আমি তাঁর সাথে কথা বলেছি। মিটিং হবে বস্। শুভ, রোবেল ওরা এসে চা দিলো। মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হলো ডা, সেলিনা হায়াত আইভি পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন।

'গত সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রথম বৈঠকে ডা, সেলিনা হায়াত আইভির মুখেই শুনেছি, রিপন তাঁকে ফোন করে বলেছিলো, আপা আপনাকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি বাড়ি এলাম কয়েকজনকে নিয়ে বের হলাম মনোনয়ন জমা দিতে। পথে মানুষের সাথে দেখা হয় আর আমাদের সাথে চলতে শুরু করে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌছাতে বিশাল মিছিলে রূপ নেয়।'

'ডা: আইভির নির্বাচনে অংশগ্রহণের এই একটা সিদ্ধান্ত গোটা নগরবাসীর ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে যা, নিশ্চিন্তে বলতে পারা যায়। ডা: আইভির নারায়ণগঞ্জে এসে অন্যায়ের প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হওয়ার নেপথ্যে কিন্তু একজন রিপনের সময়োচিত সিদ্ধান্ত ছিল। এখানে মোহাম্মদ আলী রেজা রিপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিচক্ষণতার প্রকাশ পেয়েছে।'

আমাদের পেশাগত ও সামাজিক কারণে, আলী রেজা রিপনের বিভিন্ন মহলের বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে মিলিত হবার সুযোগ হয়েছে অসংখ্যবার। গত ২৩ বছরে সকলের মাঝে বিশাল পরিবর্তন দেখা গেছে। সম্মোহনী শক্তি ছিল বলেই বন্ধু ও সহকর্মীদের মাঝে ধৈর্য ও বিনয়ের সাথে চেষ্টা করার অভ্যাসের বীজটা রোপন করে দিতে পেরেছিলো। চুনকা পরিবারের সাথে রিপনের বন্ধু ও সহকর্মীর সম্পর্কটা নিবিড়। রিপন না থাকলেও সকলে চুনকা পরিবারের সাথেই পথ চলবে। এমনটাই সকলে বলেছেন।

'তিনি একজন, দক্ষ সংগঠক, ধর্মভীরু, মানব দরদী, ভোজন রসিক, বন্ধু-বৎসল, আরও যত রকম গুণবাচক বিশেষণ আছে, তা তাঁর নামের সাথে যোগ করা যায়। রিপনের সাথে যে যত মিশেছেন, তাঁরা তত বুঝেছেন। মোবাইলের পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে থাকলে যেমন, পরিচিতদের জন্য রিপন তেমনই ছিলেন।'

(জ্ঞানের পরিধি:)
তাঁর পিতা চুনকা সাহেবের মাজারের জানালার কাচ এক পাগল ভেঙে ফেলেছিল। আর বকবক করে এটা ওটা বলছিল। এতে ঐ ব্যক্তির হাত কেটেও যায়। খবর পেয়ে মাসদাইর কবরস্থানে গিয়ে পাগলকে ডাক্তারের কাছে নেন। এরপর খাবারের ব্যবস্থা করেন। অন্য যে কেউ হলে আগে কিছু বা তাড়ানোর ব্যবস্থা করতেন। রিপন ছিল ব্যতিক্রম। কারণ ওঁদের জীবনটাই গেছে পাগল মস্তান আর মানুষের সেবা করে।
আশ্চর্যের ঘটনা শুনলে আপনারা সবাই হতচকি হতে পারেন, শংকর রায় বললেন, জানো ভাই, সেই পাগলকে নিজ হাতে চা বিস্কুট খাইয়ে দিয়েছিল, শিশু বাচ্চাকে যে ভাবে খাওয়ায়, তেমন করেন। এরপর কি ঘটলো জানো- সড়কের পাশেই একটা ট্রাকের আউলিতে গিয়ে পাগল যে কোথায় হাওয়া হলো আর খুঁজেই পেলাম না সকলে মিলে। এমনিতেও সারা নারায়ণগঞ্জ শহর ঘুরি আমরা, কিন্তু কোন দিন কোথাও সেই পাগলকে আর দেখি নাই। ভাই পাগল রূপে এটা কে ছিলেন! কি পরীক্ষা নিয়ে গেলেন তিনি?

(সাহস ও দৃঢ়তা)
২০০৪ হতে ডা, আইভির জন্য একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ এসেছে। একেক সময়, একেকটা মহল প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিহিংসার ভয়ংকররূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। শামীম ওসমানরা যা করে গেছেন তাতো বিশ্বজনীন। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ববাসী জানেন। প্রতিটি আঘাতে আলী রেজা রিপন ঠান্ডা মাথায় নেপথ্যে কিভাবে কি করেছেন মোকাবেলা করতে তা খুব কাছে হতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।

'শীতলক্ষ্যা নদীতে যেনো লাশের মিছিল বইছিল- ২০১৪ সালে, একটা উপনির্বাচনে ওপেন নেমে পড়েন। বলেছিলো, এই খুনিচক্রকে প্রতিরোধ করতে বাধা সৃষ্টি করতে হবে। বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়া যাবে না। অসীম সাহসীকতা নিয়ে প্রতিদিন সহকর্মীদের নিয়ে নেমে পড়তেন। সে বছরই এক সন্ত্রাসী গুম হলে, রেজা উজ্জল ভাগিনা মিমনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। রিপনকে জড়ানোর আশঙ্কাও করা হচ্ছিল। এতদ্বসত্বেও প্রকাশ্যে লড়াই শুরু করেন। ২নং বাবুরাইল মিলাদ ও প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। তাঁর সাহসীকতার হাজার হাজার ঘটনার বর্ণনা দেয়া যাবে গত দুই যুগের।'

তিনি আজ আর নাই। তবে তাঁর কর্ম রয়েগেছে। অগণিত মানুষ তাঁর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। আমরা দেখতে পাই আলী রেজা রিপন একজন সৎ চরিত্র ও উত্তম আচরণের মানুষ ছিলেন। তিনি মুসলিম ছিলেন, এজন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে এ বিষয়ে উদৃতি করছি,

'আল্লাহপাক বলেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে। (সূরা বাকারা : আয়াত : ৮৩)।

সুন্দর আচরণ, উত্তম ও কল্যাণকর কাজ, ভালো কথা বলা এগুলো আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ করে এবং নিজের জন্য কিংবা পরের জন্য ভালো কাজ করে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং তার রাসূলের কাছেও প্রিয়।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং হাশরের সময় আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি)।

রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘ভালো কথা সদকাস্বরূপ’। (সুনানে বায়হাকি)।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ (সুনান আত-তিরমিজী)।

নারায়ণগঞ্জের সকলের বর্ণনাতে উঠে এসেছে মরহুম একজন উত্তম আচরণের মানুষ ছিলেন।

আমরা আশা করছি মহান আল্লাহ মোহাম্মদ আলী রেজা রিপনকে উত্তম পুরস্কার বা প্রতিদান দিবেন। তিনি রোজা অবস্থায় প্রস্থান করেছেন। পরওয়ারদিগার, একজন রোজাদারকে সম্মান কিভাবে দিবেন, সেটাও কোরআন মজিদ ও হাদিসে বিবৃত আছে।

ইমামুল হাসান স্বপন।
বার্তা সম্পাদক
দৈনিক খবরের পাতা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়