অপরিকল্পিত শিল্পায়ন পরিবেশ দূষণের কারণ
মীযানুর রহমান: আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আর্ন্তজাতিকভাবে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের স্লোগান ও প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে’ ও ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরাও প্রতি বছর দিনটিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। আমাদের সকলেরই উচিৎ পরিবেশ রক্ষা করা।
পরিবেশ নষ্ট হলে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয় আর পরিবেশ রক্ষা করা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষা করে যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রেসউইং এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তিনি গনভবনে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নকশা পর্যবেক্ষনকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। যে কোন প্রকল্প গ্রহণ করে সেখানে যেন পরিবেশ রক্ষা করা গুরুত্ব পায় সেদিকে সবার দৃষ্টি দেয়া উচিৎ। জলাধার সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা রাখা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাতে গড়ে উঠতে না পারে এবং নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প জোনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিৎ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব এনজিওগুলোকেও এগিয়ে আসা উচিত। পরিবেশ রক্ষা করে পরিবেশবান্ধব দেশের উন্নয়নে সামিল হওয়া উচিত। সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
পৃথিবীর যে কয়টি দেশ বা দ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল রয়েছে বড় ধরনের ঝুকিতে। ষড়ঋতুর এদেশে এখন আর ষড়ঋতু নেই। অকালে বৃষ্টি ঘন ঘন বৃষ্টি, বেশি গরম, বেশি শীত, খরা ও বজ্রপাত এ যেন জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ। অকালে গাছপালা নিধন, নদী ভাঙ্গন সবই যেন জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ।
তাছাড়া সারাদেশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার বিষাক্ত কালো ধোয়া পরিবেশের জন্য বিরাট ক্ষতিকর। যত্রযত্র ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে, যার কালো ধোয়াও পরিবেশের জন্য হুমকি। দেশের ৬০ ভাগ ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে জ্বালানিকাঠ। জ্বালানিকাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ বলা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যে কারণে পরিবেশ দিন-দিন হুমকি হয়ে পড়েছে। কালো ধোয়ার গাড়ি ও গাড়িতে হর্ণ বাজানো শব্দ দূষণ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পরিবেশের ক্ষতিকর দিক থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে সর্বস্থানে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব দেশ আমাদের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এদিনে আমরা বলতে চাই পরিবেশ রক্ষা করেই সকলকে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষা করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকিও কমবে।
আমাদের আশেপাশে আমরা যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাই যত্রতত্র গড়ে উঠছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা। পরিবেশ দূষনের হাত থেকে রক্ষা পেতে যত্রতত্র প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। অবশ্য কিছু কিছু জায়গায় সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, জেল জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও কিন্তু থেমে নেই যত্রতত্র স্থানে শিল্প প্রতিষ্টান করা। আমরা আশা করব আগামী বাজেটে পরিবেশ রক্ষায় বেশী বরাদ্ধ রাখবেন সরকার।যা পরিবেশ বান্ধব কাজে ব্যবহৃত হবে। আশা করি সরকার আগামী বাজেটে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প করে দেশের উন্নয়ন করবে।
দেশের পরিবেশ দিনদিন যে ভাবে দূষিত হচ্ছে তা অব্যাহত থাকালে জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়বে। ফসলের উৎপাদন কমবে। ঝড়, বন্যা বাড়বে। ঝড়, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষ রোপনের বিকল্প নেই। বৃক্ষ দেশকে ঝড়, বন্যারহাত থেকে রক্ষা করে। বৃক্ষ রোপন করে ঝড়, বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা যেমন প্রয়োজন তেমনি পরিবেশ বান্ধব দেশ গঠন করাও প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেশ উন্নয়নের আরেক মাইলফলক সৃষ্টি করবেন বলে আমরা আশা করি। বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত পদ্মা সেতু কোন বিদেশী সাহায্য ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে সাহসিকতার সাথে সম্পন্ন করেছেন এজন্য তিনি বিশ্বে প্রশংসিত।
তিনি দেশকে পরিবেশবান্ধব করে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির পক্ষ থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
লেখক: মীযানুর রহমান, মহাসচিব, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম