না.গঞ্জ ছাত্রলীগের পথপ্রদর্শক হচ্ছেন অয়ন ওসমান: আজিজ
আসিফ হোসাইন (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগের সক্রীয় রাজনীতিতে আলোচিতদের মধ্যে মো: আজিজুর রহমান একজন। রাজপথের লড়াকু এই সৈনিক তার সাংগঠনিক দক্ষতায় গত কমিটিতে বাগিয়ে নেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর রাজনীতিতে একধাপ এগিয়ে যাওয়া এই ছাত্রলীগ নেতার সরব উপস্থিতি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার দৃষ্টি কাড়ে। মূল্যায়িত হন দলের ভেতর। পেয়ে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ। তার রাজনৈতিক অবস্থান, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম, আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভুমিকাসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ এর সাথে। তার সাক্ষাতকারটি প্রেস নারায়ণগঞ্জ এর পাঠকদের জন্য এখানে তুল ধরা হলো।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কেমন আছেন?
আজিজ: আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আগের কমিটিতে তো আপনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আর এবার নতুন কমিটিতে সভাপতি হলেন, অনুভুতি কেমন লাগছে?
আজিজ: অন্যরকম একটা অনুভূতি। আসলেই স্বপ্নের মতো। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের ছোট ভাই একেএম শামীম ওসমান ভাইয়ের উছিলায় আজ আমি সত্যিই সভাপতি। এক কথায় অন্যরকম এক অনূভুতি। যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: জেলা ছাত্রলীগের প্রধান দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আপনি একজন, গুরুত্বপূণ এমন পদে আসীন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাড়তি কোন চাপ বা বেগ পেতে হচ্ছে কি না?
আজিজ: না না। আমরা নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোন গ্রুপিং নেই। একদম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। আমাদের কোন চাপ নেই। আমরা প্রতিটা নেতাকর্মীকে বলার অধিকার, চাওয়ার অধিকার দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ করছি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ২৯ এপ্রিল আপনাকে সভাপতি ও আশরাফুল ইসমাইল রাফেলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। পূণাঙ্গ কমিটি কত দিনের মধ্যে করতে হবে এর কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি? কবে নাগাদ হবে?
আজিজ: বাধ্যবাধকতা তো অবশ্যই আছে। তবে আমরা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবশ্যই প্রতিটি ইউনিটকে ঢেলে সাজাবো।
প্রেস নারায়ণগঞ্জঃ অনেক আন্দোলন সংগ্রাম, রাজপথে সরব উপস্থিতি, সব কিছু মিলিয়ে দল আপনার সাংগঠনিক কাজের মূল্যায়ণ করেছে, ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হওয়ার গল্পটা আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই্।
আজিজ: আমি ক্লাস সেভেন এইট থেকেই ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। আমার খুব কাছের একটা ভাই ছিলেন। যিনি তখন ছাত্রলীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তো ভাইকে দেখেই আমি ভাবতাম, আমি যদি এমন একটা দায়িত্ব পেতাম। আসলে তখন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির প্রতি আমার টান। তারপরে ২০০৮ আমি যখন এসএসসি পাশ করলাম তখন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হলাম। এভাবেই ছাত্র রাজনীতিতে আসা।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সংগঠনের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ আছে কি না? থাকলে সেগুলো কি?
আজিজ: চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। নির্বাচনের আগে থানা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলো যেন করতে পারি এটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রতিটা কমিটি যদি থাকে তাহলে জাতীয় নির্বাচনের সময় আমাদের কাজে দিবে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জঃ নতুন নেতৃত্ব ও কর্মী সৃষ্টির বিষয়ে আপনার বা সংগঠনের ভুমিকা কি?
আজিজ: এই যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ছাত্রদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সঠিক আন্দোলনের জন্য কিন্তু সবাই ওদের সাপোর্ট দিয়েছে। কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় এখন থেকেই কিন্তু ওরা সেটা বুঝতে পেরেছে। আমি মনে করি যারা ইয়াং, পড়াশুনা করছে তাদের প্রতিটা স্কুল থেকেই যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবকিছু জানতে পারে। ছাত্রলীগের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের যারা আছে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাবো, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানাবো। যাতে করে ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্ম সঠিক নেতৃত্বে এসে দেশের হয়ে কাজ করতে পারে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বিভিন্ন সময় শোনা যায় দলের ভেতর গ্রুপিং, লবিং, মতবিরোধ. এরকম কিছু আপনাদের মধ্যে আছে কি না?
আজিজ: সেটার প্রমান আমাদের কমিটি। আমাদের মধ্যে কোন গ্রুপং নেই। কোন মতবিরোধ নেই। ছাত্রলীগ হলো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। আমরা জেলা ছাত্রলীগ সবাই একসাথে হয়ে কাজ করছি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জঃ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
আজিজ: কমিটি হওয়ার আগে থেকেই তার সাথে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক। আমি উনাকে সম্মান করি। উনি আমাকে সম্মান করে। কমিটি হওয়ার আগে থেকেই তার সাথে আমার একটি ভাল সম্পর্ক।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আওয়ামীলীগ তো মূল দল। জেলা ও মহানগর নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীণতা ও মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। এটা ছাত্রলীগের উপর কোন সাংগঠনিক প্রভাব ফেলছে কি না?
আজিজ: ছাত্রলীগ হচ্ছে সবার উপরে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ ও মহানগর আওয়ামীলীগের কোন বিভেদ নেই। সাংগঠনিক ভাবেও কোন প্রভাব পড়ছে না। সবাই আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এর চিত্র ছিল ভিন্ন। বরং আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আজিজ: বিষয়টি অবশ্যই আমি পজিটিভলি দেখছি। কেন না, সারা বাংলাদেশে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল তখন ছাত্রলীগ নামধারী বা অনেক ছেলেপেলে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বদনাম করার জন্যে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ অবশ্যই পজিটিভ। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সময় যখন বিএনপি-জামাত হরতাল ডাকতো তখন ভাইদের নেতৃতে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ কাজ করতাম। হয়তো তখন থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের উপর ভালবাসা জন্ম নিয়েছে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ছাত্রদের দাবী আদায় বা কল্যানে ছাত্রলীগ কী ভূমিকা রাখছে?
আজিজ: আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা ঘটনা বলি, আমার কমিটি হওয়ার পরপরই একটা ছেলে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হবে তোলারাম কলেজে। ছেলেটা ডিম বিক্রি করতো। তো ওর স্কুল লাইফের খরচ মার্ক টাওয়ার এর দোকান ব্যবসায়ীরা মিলে চালাতো। যে কোন মাধ্যমে ছেলেটাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। তো পরে আমি ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। আমি এখন একটা অপেক্ষায় আছি ছেলেটা খুব ভাল রেজাল্ট করে আমার কাছে এসে বলবে, ভাই আপনার জন্য আমি আজকে এতো ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছি। যাই হোক, ঘটনাটি আমি বলতে চাই নি। আপনার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বলা। আমরা জেলা ছাত্রলীগ সবসময় হত দরিদ্র শিক্ষার্থী যারা টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারছে না তাদের পাশে দাড়াবো।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আরেকটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই আইনের ছাত্র। তো আপনি কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছেন? কোথায়?
আজিজ: আমি পড়ছি রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে তোলারাম কলেজে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কেমন?
আজিজ: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে যাকে নমিনেশন দিবে তার পক্ষে আমরা জেলা ছাত্রলীগ কাজ করবো।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আচ্ছা আরেকটি বিষয়, ছাত্রলীগের নেপথ্যে অয়ন ওসমান, কথাটি আপনি কিভাবে দেখেন?
আজিজ: মাননীয় এমপি একেএম শামীম ওসমানের সুযোগ্য সন্তান একেএম অয়ন ওসমান। বর্তমান প্রজন্মের মানে হলো আমরা যারা ছাত্রলীগে আছি তাদের পথ পরিদর্শক হলেন অয়ন ওসমান। কারণ তিনি স্মার্ট। স্মার্ট একটি সংগঠনের স্মার্ট পথ প্রদর্শক।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ?
আজিজ: ম্যাসেজ একটাই। যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আর যারা ছাত্রলীগ করছো তারা (যেমন, আজকে আমি মারা যাবো। কিন্তু কালকে যেন আমাকে মনে রাখে এমন কিছু করে যেতে হবে)। যা কিছু করবে ভালোর জন্য করবে, দেশের জন্য করবে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজিজ: আপনাকেও ধন্যবাদ
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম