২২ নভেম্বর ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপডেট: ২১:৩৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মনোনয়ন দৌড়ে অন্যদের চেয়ে আমি এগিয়ে আছি: সাখাওয়াত

মনোনয়ন দৌড়ে অন্যদের চেয়ে আমি এগিয়ে আছি: সাখাওয়াত

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবরের শেষের দিকে অথবা নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা আর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে অনেক আগ থেকেই। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা খোশমেজাজে থাকলেও আকষ্মিক একের পর এক মামলায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাস্তানাবুদ। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন, গ্রেপ্তার এড়ানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিতে রয়েছেন।

এরমধ্যে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান আন্দোলন সংগ্রামে পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সভাপতি দলীয় মনোনয়ন, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিজের প্রস্তুতি-পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান কেমন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: অন্যান্য সময় থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি একটু ব্যাকফুটে আছে। কিন্তু ব্যাকফুটে থাকলেও সবাই এখন বেশ ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মহানগর বিএনপির কি অবস্থা?

সাখাওয়াত হোসেন খান: বিএনপি হলো কর্মী ও সমর্থক নির্ভর একটি দল। মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারছিলাম না। যার ফলে আমি মূল দায়িত্বে না থাকার পরেও অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করতেছি। সে ক্ষেত্রে আমি অনেকটা সফলও হচ্ছি। সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মহানগর বিএনপির সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় আছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি আপনি একজন আইনজীবী। আইনজীবীদের নেতৃত্বও দিয়েছেন দীর্ঘ সময়, ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। সে ক্ষেত্রে আপনি রাজনীতি নাকি আইনপেশা, কোনটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: রাজনীতি তো আমার পেশা না, আইন হচ্ছে পেশা। পেশার পাশাপাশি আমি রাজনীতি করি। আর আমার পেশাটা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট পেশা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নির্বাচনের আগ মুহুর্তে বিএনপির বিরুদ্ধে হঠাৎ করে এতো মামলা কেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: এইসব করেই সরকার ১০ বছর যাবত ক্ষমতায় টিকে আছে। এদেশের ৮০ ভাগ লোকের আর কোন সমর্থন নেই সরকারের উপর। নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবিয়ে রাখতেই এতোসব মামলা। এই আচরণ কোন গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এই মামলা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর কি রকম প্রভাব ফেলছে?

সাখাওয়াত হোসেন খান: গত ১০ বছরে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় প্রায় ১৫ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক নেতা আছেন যাদের বিরুদ্ধে ৫০টা পর্যন্ত মামলা আছে। এই যে মামলা হচ্ছে এই মামলার কোন ভিত্তি নাই। অনেকে হয়তো দেখা গেছে হজ্বে গেছেন, বিদেশে বেড়াতে গেছেন তারপরও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। এই মামলায় নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন জেল খেটেছে, অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সবই মিথ্যা মামলা। এইসব করেও বিএনপি থেকে কাউকে দলত্যাগ করাতে পারে নাই। বর্তমানে মামলায় বিএনপির লাভ হয়েছে। তারা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের কি পরিমান মামলা লড়েছেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: গত ১০ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১২’শ মতো মামলা হয়েছে। মোটামুটি সব মামলার মধ্যেই আমি সকলকে সহযোগিতা করেছি। কোন গ্রুপিং দেখি নাই, সকলকেই আইনী সহায়তা দিয়েছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে আপনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। কথাটা কতোটুকু সত্য?

সাখাওয়াত হোসেন খান: আসলে প্রতিটা ব্যক্তি রাজনীতি করে বিভিন্ন আশা নিয়ে। তেমনি আমারও রয়েছে। আমি ইতিপূর্বে স্বল্প পরিসর ও বৃহৎ পরিসরে নির্বাচন করছি। আইনজীবী সমিতির নির্বাচন করছি, নেতৃত্ব দিয়েছি। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করেছি। দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জে অনেকেই নেতৃত্ব দিয়েছে, জনপ্রতিনিধি হয়েছে কিন্তু তারা নেতাকর্মীদের পাশে থাকে নাই। নেতাকর্মীদের এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যা যা করার দরকার তা তারা করে নাই। তাই সাধারণ নেতাকর্মীরাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য। আমি দলের কাছে নমিনেশন চাইবো। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি ভালো করবো বলে মনে করি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মনোনয়ন পেতে আপনার প্রস্তুতি কি রকম?

সাখাওয়াত হোসেন খান: এখানে দল থেকে আরো যারা মনোনয়ন চাইতেছে তাদের থেকে আমি এগিয়ে আছি। মনোনয়ন দৌড়ে অন্যদের চেয়ে আমি এগিয়ে আছি। কারণ আমি সাধারণ ভোটারদের কাছে বেশি যাচ্ছি। প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। মহল্লায়-মহল্লায় গিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেছি। দলীয়ভাবে যারা নিষ্ক্রিয় ছিল তাদের সক্রিয় করতেছি। মামলায় মোকদ্দমায় পড়লে তাদের আইনী সহায়তা দিতেছি। দলীয় কর্মসূচিগুলো সামনে থেকে পালন করছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মনোনয়ন না পেলে আপনি কি করবেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: এটা একটি প্রতিযোগিতার মতো। নমিনেশন দেয়া না দেয়ার ব্যাপারটি নীতিনির্ধারনী ফোরামের বিষয়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমি মনোনয়ন পাবো। যদি দল মনোনয়ন না দেয় তাহলে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো। কারন আমি দলের প্রতি বিশ্বস্ত। মূল কথা হচ্ছে, দলকে ক্ষমতায় আনা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার কথা কি ভেবেছেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করার মতো হঠকারী সিদ্ধান্তে যাবো না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মনোনয়ন পেলে আপনার পরিকল্পনা কি?

সাখাওয়াত হোসেন খান: মনোনয়ন পাবো সে চিন্তা করেই এগিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছি। কেন্দ্রভিত্তিক নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করার চেষ্টা করছি। নির্বাচনে দাড়াইলেই তো আর হবে না, পাস করে আসতে হবে। এই সময় পাস করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাস করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সাখাওয়াত হোসেন খানকে জনগণ কেন ভোট দিবে?

সাখাওয়াত হোসেন খান: আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে পরীক্ষা করার অনেক সুযোগ পেয়েছে। আমি আইনজীবী হিসেবে অনেক বিষয় মোকাবেলা করেছি। যেমন, সাত হত্যা মামলা, শ্যামল কান্তি ভক্তের মামলা এসব মোকবেলা করেছি। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের সবসময় আইনী সহায়তা সহ অন্যান্য সহযোগিতা দিয়েছি। অনেক নেতাকর্মীকে বিনা পয়সায় আইনী সহায়তা দিয়েছি। সবসময় নেতাকর্মীদের সুখে-দুখে পাশে থেকেছি। এসব কারনে নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট। সবখানেই মানুষের মধ্যে আমার এক প্রকার আগ্রহ আছে আমার প্রতি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনার নির্বাচনী এলাকায় আপনি কি কি উন্নয়ন করতে চান?

সাখাওয়াত হোসেন খান: গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি একটা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম। সেখানে আমি অনেকগুলো কাজের কথা বলেছি। এই ৫ আসন শীতলক্ষ্যা নদীর কারণে বিভক্ত হয়ে আছে। সকলেই এই শীতলক্ষ্যায় সেতু নির্মাণ করার কথা বলেছেন কিন্তু সফল হতে পারেননি। আমি সেটি করবো। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অপ্রতুল। যারা আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল তারা অনেকেই তাদের সন্তানদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকায় চলে যান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে সামান্য কিছু হলেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হয়। আমি চাই যাতে নারায়ণগঞ্জের মানুষের চিকিৎসা এখানেই পেতে পারে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনি বলেছেন, শীতলক্ষ্যা সেতুর কথা। কিন্তু শীতলক্ষ্যা সেতুর তো কাজ শুরু হয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন খান: যেখানে শীতলক্ষ্যা সেতু হচ্ছে সেটা নারায়ণগঞ্জের কোন উপকারে আসবে না। সেতুটা যেখানে হচ্ছে সেটা বাইপাস সড়ক। কাঁচপুর সেতুও তো আছে, তাতে তো নারায়ণগঞ্জের মানুষের কোন লাভ হচ্ছে না। সেখান থেকে আসতেও ২/৩ ঘন্টা লেগে যায়। ডিরেক্ট বন্দর থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতে শহরে ঢোকা যায় সেই ব্যবস্থা করবো আমি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বর্তমান সংসদ সদস্যের সফলতা-ব্যর্থতাকে আপনার দিক থেকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

সাখাওয়াত হোসেন খান: কারো সমালোচনা তো না করাই উচিত। সে কতোটুকু সফল কিংবা ব্যর্থ তার বিচার করবে জনগণ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ধন্যবাদ প্রেস নারায়ণগঞ্জকে সময় দেয়ার জন্য।

সাখাওয়াত হোসেন খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়