‘আমার জীবনটা এমন হইবো কখনো ভাবি নাই’
সোহেল রানা (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): ভিক্ষা করে দশ টাকা রোজগার করতে যদি বলা হয় আমাকে বা আপনাকে, পারবেন? উত্তর হবে এর চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। তাহলে একটু চিন্তা করে দেখি তো অসহায় কোন মানুষ কতটা গ্লানি নিয়ে ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামে। আস্তে আস্তে হয়তো লজ্জা কেটে যায়, নির্লজ্জের মত টাকা চায় আমাদের কাছে। ভিক্ষুক জীবনের প্রথম দিনটা তার কিভাবে কেটেছে? কত জনের কাছে হাত পাততে যেয়েও ফিরে এসেছে লজ্জায়, কতবার চোখে ভয় নিয়ে সে আশেপাশে তাকিয়েছে পরিচিত কেউ দেখে ফেলে কিনা! কতটা গ্লানি মিশে থাকে সে অনুনয়ে যখন সে দুই হাত পেতে থাকে দুই টাকার জন্য।
ভিক্ষার পথ কেউ শখ করে বেছে নেয় না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে শেষ ভরসায় রাস্তায় নামেন হাত পেতে নিজের জীবন বাঁচাতে। তাদেররি একজন মার্জিয়া বেগম। বয়স ৩৫ বছর। গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁ হলেও এখন স্থায়ি কোনো জায়গা নেই। যেখানে সন্ধা হয় সেখনেই এক বছরের মেয়ে নাসিমাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরেন তিনি।
একবছর আগে যখন নাসিমা পেটে। তখন তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। যখন তিনি অসুস্থ ঠিক তখনি তার স্বামী মারা যায়। তারপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার চিকিৎসা হয় এবং এক সময় সুস্থ্য হয়ে উঠেন। জন্ম দেন মেয়ের। তার পর থেকেই জায়গায় জায়গায় ঘুরে মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি। পেটের দায়ে লজ্জা ভুলে হাত পাতেন মানুষের কছে।
তার সাথে যখন কথা হয় তখন খুব আক্ষেপ করেই তিনি বলেন, ‘আমার বিয়া হইছে প্রায় চৌদ্দ বছর আগে। বাপ মায়ের আদরের মাইয়া ছিলাম। একটা ছোট ভাই আছে তাও পাগল। মা-বাবা মইরা গেছে তার পরথেইকা এলাকাতেই থাকে। এলাকার মানুষই ওরে দেখে। ’
এসব বলতে বলতে নিজের অজান্তেই কেদে ফেলেন তিনি। ওড়না দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমার জীবনটা এমন হইবো আমি জীবনেও ভাবি নাই। আমার ১৩ বছরের একটা ছেলে আছে। ওর নাম ইমন। সোনারগাঁয়ে থাকে একটা দোকানে কাজ করে। দোকানের মালিক ওরে স্কুলে ভর্তি কইরা দিছে। ক্লাস সেভেনে পড়ে। ’
ঈদে কেমন দিন কাটে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, স্বামী সন্তান নিয়া আগে ভালোই দিন কাটতো। কিন্তু গত ঈদটা একা করতে হইছে এই ঈদেও একাই করতে হইব। মাঝেমাঝে মনে হয় না জানি কি অপরাধ করছিলাম। যার শাস্তি আল্লায় আমারে দিতাছে। আগের দিনগুলা মনে পরলে খুব কান্দা (কান্না) পায়। স্বামী সন্তান নিয়া কত সুখে দিন কাটাইতাম। ঈদ কত আনন্দে কাটাইতাম। যখন এইসব কথা মনে পড়ে তখন পোলাডার কথা খুব মনে পড়ে।’
নিজের উপর ভরসা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যা হবার হইছে। এখন আর পুরান কথা মনে করতে চাই না। ভিক্ষা করতে খুব লজ্জা লাগে তাই নিজের এলাকা ছাইরা আমি এইখানে আইসা ভিক্ষা করি। আমার মেয়েটা ছোট তাই কোনো কাজ করতে পারি না। আগে অসুস্থ ছিলাম তাই কাজ করতে পারি নাই। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ্য। মেয়েটাও একটু বড় হইছে। মেয়েটা আর একটু বড় হইলে আমি ভিক্ষা করা ছাইরা দিমু। নিজে কাজ কইরা খামু। এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করতাছি যাতে আল্লায় আমারে এই অভিষাপের জীবন থেইকা মুক্তি দেয়।’
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম