রূপগঞ্জ, আড়াইহাজারে ভোটার আনাই বড় চ্যালেঞ্জ
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জন করা এই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের কোথাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া ভিন্ন কোন দলের প্রার্থী নেই। অনেকটা এক দলীয় এই ভোটে প্রার্থীদের মধ্যে বাগযুদ্ধ চললেও সোনারগাঁ উপজেলা বাদে দুই উপজেলায় ভোটের মাঠ অনেকটা নিরুত্তাপ। এমন পরিস্থিতিতে এই দুই উপজেলায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।
রূপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী ভোটের মাঠে আছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হাবিবুর রহমান (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূইয়া (আনারস প্রতীক)। এ উপজেলায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আড়াইহাজার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া (দোয়াত-কলম প্রতীক), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এ উপজেলাও ভাইস চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহিদা মোশারফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপি ও সমমনা সংগঠনগুলোর বর্জন করায় এই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী না থাকা ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া, একজন প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্যদের অবস্থান নেয়া, প্রার্থীদের ঢিমেতালে প্রচারণাসহ নানান কারনে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন। নয়টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় ১৪২ টি কেন্দ্রে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার ৬০৭ জন ভোটার। রূপগঞ্জে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী দোয়াত-কলম প্রতীকের হাবিবুর রহমান। গোলাম দস্তগীর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়াতে তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সরব সংসদ সদস্যের অনুসারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনারস প্রতীকের আবু হোসেন শুরুতে গোলাম দস্তগীরের প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থনের আশা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি শাহজাহানের সমর্থন পাননি। উল্টো গত জাতীয় নির্বাচনে শাহজাহানের পক্ষ নেয়া আওয়ামী লীগ নেতারা উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। ফলে নির্বাচনের মাঠে একপাক্ষিক প্রভাব তৈরি হয়েছে হাবিবুরের।
ভোটের মাঠের এমন এক পাক্ষিক প্রভাবের কারনেই রূপগঞ্জে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রার্থীদের তেমন প্রচার প্রচারণা না থাকায় তারা এটাই জানে না এখানে কোন প্রার্থী কোন প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন নির্বাচনের প্রার্থী আবু হোসেনও। তিনি মনে করেন ভোটের মাঠে তার প্রতিপক্ষের লোকজন প্রভাব বিস্তার করায় ভোটাররা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এরই মধ্যে রূপগঞ্জে ভোটারদের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিলি করছে বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসন নিয়ে গঠিত আড়াইহাজারের ভোটের মাঠেও রূপগঞ্জের মতো একই অবস্থা। এই উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের ১৩৯ টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪০ হাজার ১৬০ জন।
উপজেলাটিতে নিজের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকের সাইফুল ইসলামকে ঘোষণা দিয়েছেন আসনটির চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্য তাঁর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে গত সোমবার ও মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগও দেন শাহজালাল।
আড়াইহাজারের ভোটারদের একটি বড় অংশই মনে করেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম আড়াইহাজারে একক ক্ষমতাধর। অন্তত গত পনের বছরে তার কথার বাইরে গিয়ে আড়াইহাজারে কেউ জনপ্রতিনিধি হতে পারেনি। গত পনের বছরে হওয়া প্রায় সব স্থানীয় নির্বাচনে নজরুল ইসলাম পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করে নিজে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এনিয়ে সমালোচনা হলেও নজরুলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে এবারও নজরুল তার পছন্দের প্রার্থীকে যে কোন মূল্যে জিতিয়ে নেবেন বলে অনেক ভোটাররা মনে করেন। আর এই কারনেই ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ায় অনিহা দেখা গেছে।
সম্প্রতি গোপালদী বাজারে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। কৃষক সায়েদুল মিয়া তাদের একজন। এই ভোটার মনে করেন, নির্বাচনের দিন সংসদ সদস্যের লোকজন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে সাইফুল ইসলামকে জিতিয়ে নেবেন। ফলে তিনি ভোট দিতে যাবেন না।
স্থানীয় পাওয়ার লুম শ্রমিক আব্দুল লতিফ জানান, ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আশপাশের লোকজন কেন্দ্রে গেলে তিনিও যাবেন। তা না হলে যাবেন না।
ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন দোয়ত কলম প্রতীকের প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে তারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন না। অথবা তাদেরকে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হবে। আমরা এখন ভোটারদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করছি। শেষ মুহূর্তে প্রশাসন উদ্যোগী না হলে ভোটার উপস্থিতি একবারেই কম হতে পারে।’