০৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪

নম পার্কের ’লাকি কুপন’ ফাঁদে নিম্নআয়ের মানুষ

নম পার্কের ’লাকি কুপন’ ফাঁদে নিম্নআয়ের মানুষ

গ্রামীণ বা চরাঞ্চলে দেখা মেলে ‘লাকি কুপন বা লটারি’ বিক্রির কার্যক্রম। নানা প্রলোভনে এইসব লাকি কুপন বিক্রির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হতে দেখা যায় দিনমজুর, রিকশাচালকদের মতো নিম্নআয়ের মানুষদের। গত বেশ কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কেও চলছে একই কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, পার্কটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের তত্ত্বাবধানেই চলছে এই লটারি বা লাকি কুপন বিক্রি। যদিও এই বিষয়ে অবগত নয় বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ফতুল্লা স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে অবস্থিত পার্কটি প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের স্মৃতিতে নির্মিত। এটি ‘নম পার্ক’ বলে অধিক পরিচিত। এই পার্কটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শাহ নিজাম নাসিম ওসমানের ছোটভাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠজন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন পার্কটির আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় ঘুরে ঘুরে মাইকিং করে ‘লাকি কুপন’ বিক্রি করা হয়। এইসব কুপন বিক্রির সময় 'গাড়ি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, টিভি' জেতার প্রলোভন দেখানো হয়। আর এই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষজন।

প্রতি কুপনের মূল্য ২০ টাকা। অনেকে আকর্ষনীয় পণ্য পাওয়ার আশায় একাধিক কুপনও কিনছেন। দিনশেষে রাতের বেলা ‘র‍্যাফেল ড্র’ এর মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের নাম ঘোষণায় ‘দেশ জনতা টিভি’ ও ‘ক্যাবল চ্যানেল’ ব্যবহার করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘লাকি কুপন’ বিক্রির নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এদের প্রধান টার্গেট রিকাশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। অনেকেই তাদের দৈনিক উপার্জন করা টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল না কিনে ‘ভাগ্য পরীক্ষায়’ কিনছেন ‘লাকি কুপন’। কিন্তু দিনশেষে অধিকাংশ ব্যক্তি প্রতারিত হচ্ছেন এবং খোয়াচ্ছেন তাঁর দৈনিক উপার্জন।

লাকি কুপন’ কেনা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘র‍্যাফেল ড্র’তে বিজয়ী কুপনের সাথে কেনা কূপনের নম্বর মিললেই তবে পাওয়া যাবে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজের মতো দামি পণ্য। তারা দামি পণ্য লাভের আশায় প্রতিদিনই কুপন কিনছেন। কেউ কেউ দৈনিক ১০-১২টা করেও কুপন কিনছেন। দেখা যায় এতে দৈনিক উপার্জনের টাকা নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়। পরে চাল, ডাল কিনতে টাকা ধার করতে হয়।

এদিকে, নম পার্কে ‘লাকি কুপন’ বিক্রি ও র‍্যাফেল ড্র’ কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান। গত ২৫ জানুয়ারি আজমেরী ওসমান তাঁর অনুসারী লোকজনকে নম পার্কে পাঠিয়ে এইসব কার্যক্রম বন্ধ করতে পার্কের লোকজনকে শাসান। এই ঘটনার পর ওই রাতেই আজমেরী ওসমানের অন্তত ৬ অনুসারীকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তারা স্থানীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি, পুলিশ ১৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন ছয়জনই। এ নিয়ে আজমেরী ওসমান ও তাঁর চাচা শামীম ওসমান বলয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে, পার্কে ‘লাকি কুপন’ বিক্রির বিষয়ে জানতে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাাদক শাহ নিজামের মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন, ‘লাকি কুপন বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে এই ধরনের কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। অনুমতি সাধারণত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী বাইন হীরা বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম না। এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়