এক যুগ পর বিকেএমইএ নির্বাচন: আলোচনায় ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী

প্রায় এক যুগ পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিকেএমইএ) ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যারা একক প্যানেলের বাইরে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের বিরুদ্ধে। এ তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা না থাকলে একক প্যানেল হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেন হাতেম প্যানেল৷
আগামী ১০ মে ৩৫টি পরিচালকের পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ৩৫ জনই বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের ঘোষিত প্যানেলের প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন—জিএম হায়দার আলী, মো. মনির হোসেন শেখ ও মো. শাহজাহান আলম।
ব্যবসায়ী নেতাদের বড় একটি অংশ মনে করেন, বিগত প্রায় এক যুগ ধরে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিবারের প্রভাবের কারণেই নির্বাচন হয়নি। বরং প্রতি পর্ষদ গঠনের আগে ঢাকায় ‘সমঝোতার বৈঠকে’ বসে প্যানেল ঠিক করে দেওয়া হতো।
বিকেএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন একেএম সেলিম ওসমান। পরের নির্বাচনেও তিনি সভাপতি হন। ২০১২ সালের পর আর কোনো ভোটগ্রহণ হয়নি। প্রতিবারই একক প্যানেল ঘোষণা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পর্ষদ গঠন করা হতো। প্রায় এক যুগ পর হতে যাওয়া বিকেএমইএ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের নিট শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বাড়ছে আগ্রহ।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম, মনসুর আহমেদ, ফজলে শামীম এহসান, মো. সামসুজ্জামান, অমল পোদ্দার, মো. মোরশেদ সারোয়ার, মোহাম্মদ রাশেদ, আশিকুর রহমান, মো. জামাল উদ্দিন মিয়া, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, নন্দ দুলার সাহা, মো. আব্দুল হান্নান, ইঞ্জিনিয়ার ইমরান কাদের তুর্য, ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ, মোহাম্মদ জাকারিয়া ওয়াহিদ, মিনহাজুল হক, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন রিপন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, গাওহার সিরাজ জামিল, আহমেদ নূর ফয়সাল, মোহাম্মদ শামসুল আজম, ফওজুল ইমরান খান, মোহাম্মদ সেলিম, আহসান খান চৌধুরী, মো. শাহরিয়ার সাইদ, রাজীব চৌধুরী, মো. মহসিন রাব্বানি, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, মো. মনিরুজ্জামান, এম. ইসফাক আহসান, মো. মামুনুর রশিদ, রাকিব সোবহান মিয়া, আব্দুল বারেক, মো. ইয়াসিন।
অভিযোগ রয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর দেশের রাজনীতির চিত্র বদলালেও বিকেএমইএ’র নেতৃত্বে এখনো ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের প্যানেলের প্রার্থীদের বড় একটি অংশই সেলিম ওসমান ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিকেএমইএ’র বিগত নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হাতেম ঘোষিত প্যানেলের ২০ জন প্রার্থী পূর্ববর্তী বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সেলিম ওসমানের আগের প্যানেলগুলোতেও ছিলেন৷ পরবর্তীতে বিকেএমইএ’র গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন৷
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল গত নির্বাচনে প্যানেলভুক্ত হওয়া নয় হাতেমের ঘোষিত প্যানেলের অধিকাংশ নেতা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন এবং সাবেক সভাপতি সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন। এমনকি মোহাম্মদ হাতেম নিজেও বিগত নির্বাচনগুলোতে সেলিম ওসমানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে অংশ নিয়েছিলেন। পাঁচ মেয়াদে বিকেএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদে সহসভাপতি ও নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন হাতেম।
তবে, এবারের নির্বাচনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী অন্তত ভোটবিহীন নির্বাচনের তকমাটি ঘোচালো৷ ভোটহীন এক যুগ পেরিয়ে বিকেএমইএ-তে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণ ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্ব বহন করছে। তারা শুধু একটি প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং দীর্ঘদিনের একক পরিবারের আধিপত্যের বিরুদ্ধেও দাঁড়াচ্ছেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিকেএমইএ-তে অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্বের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা৷