চেম্বারের পর এবার বিনা ভোটের পথে বিকেএমইএ’র নির্বাচন

নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সভাপতি পদটি গত ১৪ বছর আকড়ে ধরে রেখেছিলেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। প্রতি নির্বাচনেই তার নেতৃত্বাধীন প্যানেল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত ঘোষণা হতো।
গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা পাল্টালেও ভোটহীন নির্বাচনের এই সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এবারও বিকেএমইএ’র নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে, এ পরিস্থিতি নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসায়ীদের আরেকটি বড় সংগঠন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচনে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ১৯ জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এবং পরে তাদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
যদিও গণআন্দোলনের পর সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি নির্বাচনের প্রত্যাশা জেগেছিল, বাস্তবে তা হতাশায় রূপ নিয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল ছিল বিকেএমইএ’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের ৩৫টি পদে নির্বাচন হলেও এবার মনোনয়ন জমা পড়েছে ৪২টি। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৩৯ জন। ফলে প্যানেলবহির্ভূত প্রার্থী মাত্র ৩ জন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ১৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগও রয়েছে।
আগামী ১০ মে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত রয়েছে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নে যদি প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে, তাহলে আগের মতো এবারও বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন পরিচালকরা। পরে এদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন করা হবে।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫৭২ জন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিকেএমইএ’র শেষ নির্বাচনেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সেই নির্বাচনে পরপর সপ্তমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, যিনি ১৪ বছর ধরে এ পদে ছিলেন। তখন তার প্যানেলের বাইরে কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। অভিযোগ রয়েছে, সেলিম ওসমান ‘নির্বাচন নয়, সিলেকশন’-এর মাধ্যমে নেতৃত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করতেন।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহর ছেড়ে পালিয়ে যান জাতীয় পার্টির এ নেতা। পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি বিকেএমইএ’তে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি নির্বাহী সভাপতির পদে থাকা মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি করার পরামর্শও দেন।
তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেলেও বিকেএমইএ’র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সেই পরিবর্তনের ছাপ পড়েনি। বরং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মতো এখানেও ভোটবিহীন নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে চেম্বারের নির্বাচনেও ১৯ জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর প্রতিযোগিতা না থাকায় ভোটগ্রহণ ছাড়াই ফল ঘোষণা করা হয়। পরে চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু।
এদিকে, বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধেও রয়েছে ‘জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা ও আওয়ামী লীগ সরকারঘেঁষা অবস্থানের’ অভিযোগ। হাতেম এখনও ‘ওসমান পরিবারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন’ বলেও অভিযোগ একাধিক ব্যবসায়ীর। যদিও এসব ছাপিয়ে তিনি বিগত ৯ মাস ধরে বিকেএমইএ’র নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এবং এবারও প্যানেলসহ প্রার্থী হয়েছেন।
সব মিলিয়ে, সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা আবারও হতাশায় রূপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।