স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে মেট্রোর আদলে নতুন ট্রেন

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে মেট্রোর আদলে নতুন কমিউটার ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের লক্ষে এক হাজারেরও বেশি ধারণক্ষমতার নতুন বগি সংযুক্ত এ ট্রেনটি দিনে ও রাতে ১৬ বার আসা-যাওয়া করবে।
বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ট্রেনটির যাত্রা শুরু হয়। সকাল এগারোটার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছাড়ে বলে জানান চাষাঢ়া স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শামসু মোহাম্মদ খাঁজা সুজন।
চাষাঢ়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এই সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্টেশন মাস্টার সুজন বলেন, “শতাব্দী পুরোনো এ রেলপথে আগে পুরোনো ধাঁচের ট্রেনগুলো চলাচল করতো। যাত্রীদের সুবিধার্থে মেট্রো রেলের আদলে নির্মিত নতুন একটি কমিউটার ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। এ ট্রেনে আগের চেয়ে বেশি বগি সংযোজন করা হয়েছে। মুখোমুখি আসনে বসার পরও নিরাপদে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও এ ট্রেনে রাখা হয়েছে। এছাড়া, সংযুক্ত করা হয়েছে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যান।”
আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হলেও ট্রেনযাত্রার ভাড়া আগের মতো ২০ টাকা রয়েছে জানিয়ে সকল যাত্রীকে টিকেট কেটে চলাচলের অনুরোধ জানান এ রেল কর্মকর্তা।
রেল ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, আগে এ রুটে চলাচল করা ট্রেনের বগি ছিল আটটি, যা এখন বাড়িয়ে এগারোটি করা হয়েছে। একযাত্রায় মোট ১১৭৬ জন যাত্রী বহনক্ষমতা সম্পন্ন ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময় পরপর দিনে ও রাতে ১৬ বার যাত্রী পরিবহন করবে। পুরোনো আটটি বগি-সম্পন্ন ট্রেনগুলোতে বর্তমানের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ছিল। এখন একটি ট্রেনে এগারোটি বগি সংযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন কমিউটার ট্রেনের বিশেষ আরেকটি সুবিধার কথাও জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি বলেন, “এ ট্রেনের বগিগুলোতে ইন্টার-কানেক্টিভিটি রাখা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা একটি বগি থেকে আরেক বগিতে সহজেই যাতায়াত করতে পারেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যাত্রীদের জন্য এটি রেলওয়ে বিভাগের উপহার।”
‘নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা’ উল্লেখ করে এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার লক্ষে কাজ করছেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
আধুনিক যাত্রীসুবিধা-সম্পন্ন এ রেলসেবা চালু করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে, তারা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান ধরে রাখার দাবি জানিয়েছেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “জেলা প্রশাসকের সুযোগ্য নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের রেল ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য যে কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এখানে ব্যবসা বানিজ্যের জন্য অনেক লোক আসে ফলে যানযটে না থেকে এই যোগাযোগ আরও ভূমিকা রাখবে।”
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম ট্রেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ রেলসেবা মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করি।”
তবে, সাধারণ মানুষের যাত্রা আরও নিরাপদ করার দিকে মনোযোগ দিতে প্রশাসনের প্রতি তাগিদ দেন এ ছাত্রনেতা।
ঈদের আগে মেট্রোর আদলে নির্মিত এ কমিউটার ট্রেন সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রার ভোগান্তি লাঘব করবে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন।
তবে, তিনি বলেন, “ব্যস্ততম এ রুটে মাত্র একটি ট্রেন যুক্ত করা হয়েছে। এ ট্রেনটিই ১৬ বার যাওয়া-আসা করবে। যাত্রাপথে ট্রেনটি বিকল হয়ে পড়লে যাত্রীভোগান্তি বাড়বে। এক্ষেত্রে অন্তত আরেকটি ট্রেন দ্রুত সংযুক্ত করা উচিত।”