১২ মার্চ ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শামীম ওসমানকে পালাতে সহযোগিতা করেছে বিএনপি: রফিউর রাব্বি

শামীম ওসমানকে পালাতে সহযোগিতা করেছে বিএনপি: রফিউর রাব্বি

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘গডফাদার শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ ছেড়ে পালাতে বিএনপির লোকজন সহযোগিতা করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।

ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, “গডফাদার শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু শামীম ওসমান ও তার পরিবারের লোকজনকে পালাতে সাহায্য করলো কে? আমরা দেখলাম, শামীম ওসমানকে পালাতে সাহায্য করেছে বিএনপির লোকজন। এই দেশের বর্ডার অতিক্রম করে তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে দিয়েছে। বিএনপির যেই নেতা এই খুনি পরিবারকে দেশের বাহিরে যেতে সাহায্য করেছে, আমরা দেখলাম বিএনপি থেকে তাকে পুরুস্কৃত করে জেলা কমিটির বড় নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “তিনদিন আগে বন্দরে স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কারা তাদের রক্ষা করছে? এই খুন-খারাবির সাথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে যারা জড়িত ছিল, সবাই দেশ ছেড়ে পালায় নাই। অনেককেই বিএনপি তাদের ছত্রছায়ায় নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।”

লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের জমি বিক্রির প্রসঙ্গ তুলে রাব্বি বলেন, “ওসমান পরিবারের সাথে আঁতাত করে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ৭০০ কোটি টাকার এই সম্পত্তি মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে এই নীট কনসার্নের জয়নাল-জাহাঙ্গীররা। ৫ আগস্টের পরে এই জাহাঙ্গীর আজমেরীকে সাহায্য করেছে এবং তাকে থাকতে আশ্রয় দিয়েছে। এখনও এই খুনিদের সহযোগী জাহাঙ্গীররা বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা তাদের রূপ বদলে আজকে বিএনপি সেজে যাচ্ছে।”

‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের শেল্টার দেওয়া’ বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা ১৬-১৭ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিলেন, এখন বিভিন্ন কথা বলছেন। আপনাদের আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা স্মরণ করি, যদিও নারায়ণগঞ্জে আপনারা কী করেছেন তা আমরা সব জানি। আপনাদের কোন কোন নেতা ওসমান পরিবারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জিন্দাবাদ দিয়েছে, তাদের সাথে হাত তালি দিয়েছে, তাও আমরা জানি। কিন্তু তারপরেও বিএনপির উপর জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছিলাম, আমরা প্রতিবাদ করেছি, আপনাদের প্রতি আমরা সহনশীলতা দেখিয়েছি। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন, সেই পতিত স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া সাম্রাজ্য আপনারা দখল করে নিবেন, তাহলে ভুল করছেন।”

অসংখ্য খুন ও অপরাধী কার্যক্রমে অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানের বাহিনীর লোকজন ‘বিভিন্ন বাহিনীতে’ ঢুকে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রফিউর রাব্বি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১২ বছরেও এর বিচারকাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সারাবিশ্বের মানুষ জানে শেখ হাসিনা ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তার দলীয় ক্যাডার ও মাফিয়ারা জড়িত ছিল। তিনি যেহেতু মাফিয়া ও গডফাদার-নির্ভর শাসক ছিলেন, তাই এদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেননি। তার প্রশাসনও গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রেখেছিল। এবং এর পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছে।”

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ত্বকী ছাড়াও সাগর-রুনি, তনু, মুনিয়া, নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, ভুলুসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
সংবাদপত্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

নারায়ণগঞ্জের নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, “আগে ডিসি-এসপি গৌরব করে বলতেন যে, তারা ছাত্রলীগ করা ক্যাডার। সেই সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। আজকে যারা দায়িত্বে এসেছেন তারও যদি আগের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করেন, তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জায়গা কোথায় হবে? আপনাদের (ডিসি-এসপি) দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটি দলের হয়ে তাদের পক্ষে ছাতা ধরা কিংবা তাদের কথায় ওঠা-বসা আপনাদের কাজ না।”

আন্দোলনের মুখে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা বাসের ভাড়া কমানো হলেও এ রুটে একটি এসি-বাসের ভাড়া ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি নূরউদ্দিন আহমদ, বাসদের সদস্য সচিব আবু নাঈম খান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাবেক সভাপতি জাহিদুল হক দিপু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, খেলাঘর আসরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়