১২ মার্চ ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:২১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৩:৩৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত সিটি কর্পোরেশনের ৮ কর্মচারী

নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত সিটি কর্পোরেশনের ৮ কর্মচারী

সরকার পরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মাস্টার রোলে (অস্থায়ী) চাকরি করা বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরি হারানো কর্মচারীদের অভিযোগ, কোনো প্রকার পূর্বনোটিশ বা সতর্ক করা ছাড়াই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

যদিও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানাননি। নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের ভাষ্য, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন— নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল, এ তিন অঞ্চলে বিভক্ত। চাকরি হারানোদের মধ্যে আটজন সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে পদায়িত ছিলেন। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে একজন নারীকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও সমালোচনার জন্ম দিলে তাকে আবার চাকরিতে পুনর্বহালের ঘটনাও ঘটেছে।

সিটি কর্পোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকার পরবর্তীতে সারাদেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো থেকে তৎকালীন মেয়রকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। অপসারিত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের টানা তিনবারের নির্বাচিত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও। আইভী তার দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় সিটি কর্পোরেশনে কর্মচারীদের রদবদলের কার্যক্রম। মাস্টার রোলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এমনকি এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রদবদল করা একাধিক কর্মচারীকে এখনও তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে বসিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

কর্মচারীদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা পুরোনো লোকজনকে সরিয়ে সেখানে নতুন নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। নতুন নিয়োগের মধ্য দিয়ে তারা বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ওইসব কর্মচারী দীর্ঘবছর এক পদে চাকরি করছিলেন। তারা কর্পোরেশনে অন্য কর্মচারীদের উপর প্রভাব বিস্তার করতেন। এ কারণে কয়েকজনকে রদবদল করে বিভাগ পরিবর্তন করা হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের মাস্টার রোলে চাকুরিরত কর আদায় বিভাগের ৫ জন, লাইসেন্স বিভাগের ৪ জনকে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের কোনো প্রকাশ সতর্ক করা কিংবা কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই ‘অন্যায়ভাবে’ চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই কর্মচারীদের। চাকরি হারানোরা এক যুগের বেশি সময় ধরে সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করছিলেন বলে জানান।

চাকরি হারিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের লাইসেন্স পরিদর্শক এসএম রাসেল। তিনি বলেন, “আমাদের কোনো কারণ দর্শানো হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি আমাদের বললো, কাল থেকে আর কাজে এসো না। এরপর আমরা একাধিকবার সিটি কর্পোরেশন গিয়েছি। আমাকে জানানো হয়েছে, আমি ঠিকমতো কাজ করি না, অভিযানে যাই না। কিন্তু আমরা নিয়মিত অভিযানে যাই।’

তিনি বলেন, “অভিযানের বিষয়গুলো তো আর মৌখিকভাবে হয় না। সবকিছু লিখিত থাকে। আমার কাছে লিখিত তথ্য রয়েছে, অভিযানের রসিদ আছে। তবু আমাদের কোনো কথায় তারা কান দিচ্ছে না। গত বুধবারও আমি সিটি কর্পোরেশন গিয়েছিলাম, মিরাজ স্যার (প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্ত কে এম ফরিদুল মিরাজ) জানিয়েছেন, আমাদের কাজে নিবে কিনা এ বিষয়ে তিনি আলোচনা করবেন।”

কর আদায়কারী সুরাইয়া সাদেক কাজল বলেন, “আমি গত ১২ বছর যাবৎ সিটি কর্পোরেশনে কাজ করি। আগস্টের পর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে আমি রেজিষ্টারে কারচুপি করেছি। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য আমাকে সেপ্টেম্বরে সাময়িকভাবে সদর অফিসে স্থানান্তর করা হয়। সে তদন্ত এখনো চলমান, শুনানি চলছে। এরই মধ্যে আমাকে বলা হয়, আমি যেন আর চাকরিতে না আসি।”

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, “রেজিস্টার লেখার সময় আমার ভুল হয়েছিল। সেটা একটু কাটাছেড়া করা হয়েছিল। তবে রেজিস্টার ছাড়া অন্যান্য ট্যালি খাতায় কোনো কাটাকাটি নাই। আর সব জায়গায় একই লেখা। তদন্তেও এটাই পেয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন চাকরিচ্যুত করা হলো আমার জানা নেই।”
দীর্ঘ বছর এক জায়গায় চাকরির পর এখন চাকরি হারিয়ে কোথায় চাকরি খুঁজবেন তা নিয়ে সংকটে পড়ার কথা জানান এ নারী।

চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল নুপুর নামে এক নারীরও। তিনি আলোচিত সাতখুনের ঘটনার ভুক্তভোগী গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। সাতখুনের ঘটনার পর মানবিক বিবেচনায় তাকে মাস্টার রোলে অস্থায়ী চাকরি দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আইভীকে অপসারণের পর নুপুরকেও চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মৌখিকভাবে তাকে চাকরিচ্যুতের ঘোষণা দেওয়ার পরও আবার তাকে ডেকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ নারী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এটা সচিব ও সহকারী সচিব বলতে পারবে। তারাই এ বিষয়গুলো দেখেন।

নাসিক সচিব (উপ সচিব) নূর কুতুবুল আলম বলেন, মাস্টাররোলে নিয়োগকৃতদের যেকোনো কারণে, যেকোনো সময় চাকরিচ্যুত করার নিয়ম আছে। সম্প্রতি অনেককে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রশাসক এবং নির্বাহী কর্মকর্তা নেন আমি তাদের সহযোগিতা করি।

সিদ্ধিরগঞ্জে একসাথে ৮ জনকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। আর যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের ন্য শুনানির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। সিটি কর্পোরেশন থেকে এমন কোনো শুনানি চলছে না।

চাকরিচ্যুত করার পর চাকরী ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যার চাকরি চলে গেছে সেটা চলে গেছে। তাকে আবার চাকরিতে রাখার কোনো কারণ নেই। 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়