০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২২:৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

যানজট, হকার সমস্যা, মাদক, কিশোর গ্যাং ও চাঁদাবাজি

নতুন ডিসির সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

নতুন ডিসির সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা৷ নবাগত এ ডিসিকে শিল্পাঞ্চলখ্যাত এ নগরীর বহুমুখী সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। বিশৃঙ্খল এ শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে নবাগত ডিসিকে শহরের যানজট, হকারদের দখলদারিত্ব, মাদক, কিশোর গ্যাং এবং চাঁদাবাজির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে৷

জেলার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের যানজট, হকার সমস্যা, মাদক, কিশোর গ্যাং এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, “যানজট, হকার সমস্যা এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসব সমস্যার সমাধানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রধান সড়কগুলোতে হকার সমস্যা সমাধানে আমরা বিকল্প কর্মব্যবস্থা নিয়ে কাজ করব। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো হবে।”

ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যা দীর্ঘ যানজট। মাত্র ২ কিলোমিটারের এই শহরে যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। তবে ছাত্র-জনগণের অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তার অভাবে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এ শহর। বর্তমানে নগরীর মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ যানজট। মাত্র ১০ মিনিটের পথে ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হয় যানজটে। যা নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের যানজটের সাথে জড়িয়ে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অবৈধ পার্কিং এবং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও হকার সমস্যাও। যদিও এসব কাজ ট্রাফিক বিভাগের, কিন্তু বিচ্ছিন্ন ট্রাফিক বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। আর এটি নবাগত জেলা প্রশাসকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমস্যা নতুন নয়। হকার সমস্যায় সমাধানে সকলে একমত হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। পৌরসভা থেকে হকারদের পুনর্বাসন করার পরও তারা ফিরে যান ফুটপাতে। হকার সমস্যার চালিকা হিসেবে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক স্বার্থকে চিহ্নিত করেন অনেকে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থে হকারদের সমর্থন দিয়ে আসছিল ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমান। তার সমর্থনের কারণে হকার উচ্ছেদ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।

জুলাই আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করতে দেখা যায় ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন বেশ কয়েকজন হকার নেতাকে। গত ৫ আগস্টের পরও শহরেই দেখা যায় তাদের। তবে গণমাধ্যমে হামলার কিছু ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পলাতক ওইসব হকার নেতারা।
এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার ও তাদের আস্থাভাজন হকার নেতারা না থাকলেও ফুটপাতে বহাল রয়েছে হকাররা। আরও কয়েকগুণ হকার বেড়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। পুরনো নেতার পরিবর্তে এসেছে নতুন নেতারা। থেমে নেই চাঁদাবাজি। নতুন নেতাদের সমর্থনে এরই মধ্যে বেড়ে উঠেছে হকারদের দৌরাত্ম্য। হকাররা ফুটপাতের পর নেমে এসেছে সড়কে। যা যানজটের আগুনে ঘিয়ের মতো কাজ করেছে।

সচেতন মহলের দাবি, বিশৃঙ্খল শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে হকার সমস্যার সমাধান আবশ্যক। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হকার সমস্যার সমাধান সম্ভব।

অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় নারায়ণগঞ্জ মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। জেলায় বেশ কিছু এলাকা মাদক ব্যবসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতিও লাভ করে। তবে জুলাই আন্দোলনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবনতির ফলে তা আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মাদক সেবন ও ব্যবসা শুধু যুবসমাজকেই ধ্বংস করছে না, বরং এটি কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম বাড়াচ্ছে।

বিগত কয়েক মাসে শহর ও শহরতলীর এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাই। প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যায়, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট—চাষাঢ়া, কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন, ফতুল্লা এবং সাইনবোর্ড এলাকায় অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। বিশেষ করে ভোরবেলা এবং গভীর রাতে চলাচলকারী পথচারীরা ছিনতাইয়ের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায়শই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ছিনতাই এবং দলীয় সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া নবাগত ডিসির জন্য অন্যতম অগ্রাধিকার।

বাণিজ্যিক শহর নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। যানবাহন, বাজার, হকার, নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি একটি সমস্যা। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন নগরবাসী।

নবাগত ডিসির সামনে নারায়ণগঞ্জকে একটি উন্নত, নিরাপদ এবং বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এই সমস্যাগুলোর সমাধান একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নতুন জেলা প্রশাসক এসব সমস্যার সমাধানে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, “নারায়ণগঞ্জে এখন একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যানজট, হকার, মাদক, চাঁদাবাজির কারণে এ শহর অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এসবের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থও জড়িত। তাই এগুলো অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা মনে করি, প্রশাসন উদ্যোগী হলে এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব। নবাগত জেলা প্রশাসক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের ও নগরবাসীর সহযোগিতায় তা করতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত ডিসি মাহমুদুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের হলেও তিনি তার পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করেছেন। আমরা আশা করি, নবাগত জেলা প্রশাসকও মাহমুদুল হকের মতো সবার সঙ্গে কাজ করবেন এবং নারায়ণগঞ্জকে বাসযোগ্য করে তুলবেন। প্রয়োজনে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়