০৮ জানুয়ারি ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

শাওন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ডিবির সাবেক এসআই ৫ দিনের রিমাণ্ডে

শাওন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ডিবির সাবেক এসআই ৫ দিনের রিমাণ্ডে

নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন আহম্মেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান কনক ওরফে মাহফুজুল হককে ৫ দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার (৬ জুন) সকালে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাসুম এ আদেশ দেন।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান জানান, সাবেক ডিবির কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমাণ্ড আবেদন করে সদর মডেল থানা পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহফুজুর রহমান আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নে (এপিবিএন) কর্মরত রয়েছেন। তাকে তার কর্মস্থল থেকেই গ্রেপ্তারের কথা জানান সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিরউদ্দিন আহমদ।

২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে দলটির নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে শাওন আহম্মেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

গত বছরের ২১ অক্টোবর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত যুবদল কর্মীর ভাই মিলন মিয়া। ওই মামলায় আসামি করা হয় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্যসহ (এমপি) ৫২ জনকে।

মাহফুজুর রহমান কনকও ওই মামলার আসামি ছিলেন। ঘটনার দিন তাকে একটি চায়নিজ রাইফেল দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
এর আগেও এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর একই থানায় মামলা করেছিলেন মিলন। ওই মামলায় বিএনপির পাঁচ হাজার অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

মিলন প্রথম মামলা হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, ‘এই মামলার বিষয়ে আমি বা আমার পরিবারের কেউ কিছু জানি না। পুলিশ আমাদের কাছে একটি সাদা কাগজে সই নিয়েছে।’

পরে গত বছরের অক্টোবরে দায়ের করা মামলায় সদ্য সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু ও গোলাম দস্তগীর গাজী, জাতীয় পার্টির সাবেক দুই সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলাটিতে সাবেক এসপি ছাড়াও ৩৭ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তৎকালীন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান কনকের হাতে থাকা 'চাইনিজ রাইফেল' থেকে ছোড়া গুলি যুবদল কর্মী শাওনের শরীরে বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সংঘর্ষে বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর পুলিশি পাহারায় দাফন করা হয়। জানাজা ও দাফনের সময় নিহতের পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। তৎকালীন পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ওপর তৎকালীন প্রশাসনের প্রচণ্ড চাপ ছিল এবং আমরা ছিলাম ভীত-সন্ত্রস্ত। তখন আমিসহ আমার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জিম্মি করে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপির অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার লোকের নামে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য করা হয়। পরে আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলে তাতে আমার আপত্তি নেই মর্মে জোরপূর্বক জবানবন্দি দিতেও বাধ্য করা হয়।’

ঘটনার তিনদিন পর ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলার পিটিশন দাখিল করেন। যদিও পরবর্তীতে আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত।

আদালত মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার পেছনেও তৎকালীন পুলিশ, প্রশাসন, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ ছিল বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন মিলন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়