বিকেএমইএ’র ঘাড়ে সেলিম ওসমানের ‘ভূত’
গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে টানা ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনে হয়েছে ক্ষমতার পালাবদল। তবে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)-তে এখনো রয়ে গেছে সাবেক সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের অদৃশ্য প্রভাব। সরকার পতনের আগ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির এ নেতা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অজ্ঞাত অবস্থান থেকে নিজের পদত্যাগপত্র বিকেএমইএ’তে পাঠান তিনি। পদত্যাগ করলেও এখনো তিনি যেন সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসে আছেন পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমএইএ'র ঘাড়ে। কাগজে কলমে পদত্যাগ করলেও অদৃশ্যভাবে তিনি এখনো বিকেএমএইএ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ৷ কোনভাবেই বিকেএমএইএ থেকে তার প্রভাব সরানো যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে এক সহসভাপতি পদত্যাগের একদিন পরেই সেই অদৃশ্য হাতের ইশারায় পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বিকেএমইএ'র ২০২৩-২০২৪ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিয়রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ৫ ডিসেম্বর ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিকেএমইএ'র ২০২৩-২০২৪ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভা(ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্যুভেনিয়রে দেখা গেছে সেলিম ওসমানসহ বর্তমান নেতৃত্বের দুইটি ছবি। বিগতদিনে বিকেএমইএ'তে অনেকেই সভাপতি থাকলেও কারো কোন ছবি না থাকলেও ছবি ছিল সেলিম ওসমানের। এতে ক্ষেপেছেন ব্যবসায়িক সংগঠনটির একাধিক নেতা। তারা বলছেন, সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণ থেকে এখনো বের হতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব।
দীর্ঘদিন একক অধিপত্য বিস্তার করা সেলিম ওসমানের অনুসারীরা এখনও পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের ‘দোসররা’ এখনও বিকেএমএইএ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে এখনো সেলিম ওসমানের ছবি থাকছে স্যুভেনিয়রে।
এখনও পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি পদে রয়েছেন সেলিম ওসমানের মেয়ের জামাতা আখতার হোসেন অপূর্ব, ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ মোরশেদ সারোয়ার সোহেল। পরিচালক পদে আছেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনু। এরমধ্যে মোরশেদ সারোয়ার সোহেল ও শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনুর বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা মামলা।
বিকেএমএইএ'র বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বিএনপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তাঁর বক্তব্য, বিবৃতির সবকিছু আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন। মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াসউদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে।’
বিকেএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ থাকলে ‘বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা ‘দালালদের বিতাড়িত’ করার আহ্বান জানান।