০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ওসমান শিবিরের’ ঝন্টু আবার বিএনপিতে

‘ওসমান শিবিরের’ ঝন্টু আবার বিএনপিতে

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু। রাজনীতিতে কোনো পদ-পদবী না থাকলেও বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন। বিগত বছরগুলোতে ‘ওসমান শিবিরের’ একজন ছিলেন তিনি। ওসমান পরিবারের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার।

স্থানীয়ভাবে বিএনপি নেতা বলে পরিচিতি থাকলেও দলের সমর্থিত ‘ধানের শীষের’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করারও উদাহরণ রয়েছে তার। তবে দেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে আবারও ভোল পাল্টে ফেলেছেন সাবেক এ জনপ্রতিনিধি। গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে টানা দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন ওসমান পরিবারের লোকজন। তারা বিদেশে পালিয়েছেন বলেও একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবারও বিএনপির আশ্রয়ে ফেরার চেষ্টায় তৎপর জমশের আলী ঝন্টু।

বিগত বছরগুলোতে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকলেও বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে তার দেখা মিলতো না। দীর্ঘ সময় পর গত ৩০ নভেম্বর ফতুল্লা বিএনপির এক সমাবেশে দেখা গেছে জমশের আলী ঝন্টুকে। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এ মঞ্চে ঝন্টুর উপস্থিতি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে পারিবারিক পরিচিতির কারণে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে তখন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। ২০২২ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেননি তিনি। ওই ওয়ার্ডে তার ছেলেকে প্রার্থী করলেও আরেক বিএনপি নেতা অহিদুল ইসলাম ছক্কুর কাছে পরাজিত হন।

বিএনপির স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সমর্থন ও ওসমান পরিবারের আশীর্বাদে বারবার জিতলেও দলের প্রয়োজনে কখনো দেখা মেলেনি জমশের আলী ঝন্টুকে। আন্দোলন-সংগ্রামে যেমন তার দেখা মেলেনি, তেমনি বিপদেও কখনো তাকে পাশে পায়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই সুদিনে বিএনপিতে তার ফেরা ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়াকে আমরা ভালোভাবে নিচ্ছি না।’

বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, সুযোগ আসলে আবারও ‘পল্টি’ দিবেন ঝন্টু, ভিড়বেন ‘ওসমান শিবিরে’।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওসমান পরিবারের সাথে জমশের আলী ঝন্টুর সখ্যতা ছিল প্রকাশ্যে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি ছিল। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া ও নির্বাচনের দিন কর্মীদের ২ হাজার প্যাকেট বিরিয়ানি বিতরণের অভিযোগও রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেলিম ওসমানের পক্ষ নিয়ে ঝন্টু বিবি মরিয়ম উচ্চ বালিকা ও আইইটি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরামের এজেন্টদের ‘গালাগালি করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন’ বলেও অভিযোগ ওঠে। একই বছরের ২৬ জুন একেএম সেলিম ওসমানের সংসদ সদস্য হিসেবে ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও ছিলেন জমশের আলী ঝন্টু। বিএনপির কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে ‘মাই ম্যান’ বলে পরিচিত করতেন সেলিম ওসমান। ঝন্টু ছিলেন তাদের একজন।

নারায়ণগঞ্জ শহরে বিরোধী দল ও বিরুদ্ধমতের উপর অত্যাচার, নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে যে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে সেই পরিবারের ঘনিষ্ঠ জমশের আলী ঝন্টুর বিএনপিতে ফেরার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিএনপির তৃণমূলে। তাদের ভাষ্য, জমশের আলী ঝন্টুকে বিএনপিতে জায়গা দিলে যারা গত সাড়ে ১৫ বছরে মাঠে ময়দানে লড়াই করেছেন, মামলায় জর্জরিত হয়ে কারাভোগ করেছেন, তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। দলের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে তৃণমূলে ক্ষোভ না বাড়িয়ে ‘ঝন্টুদের’ প্রত্যাখান করা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়