চেম্বার সভাপতির হস্তক্ষেপে তল্লায় স্কুলভবন নির্মাণ জটিলতার সমাধান
অবশেষে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও মডেল গ্রুপের এমডি মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদের হস্তক্ষেপে সদর উপজেলার তল্লা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজ নিয়ে জটিলতার সমাধান হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
প্রায় এক দশক ধরে ভবন ছাড়াই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছিল পাশের আরেকটি বিদ্যালয় ভবনে। ভূমি নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জটিলতা নিরসন হওয়ার পর ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।১৯৩৫ সালে তল্লা এলাকায় প্রায় ২১ শতাংশ জমিতে পাশাপাশি দুই ভবনে ৪৯ নম্বর তল্লা বালক ও ৪৮ নম্বর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে দুটি পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালে ভূমিকম্পে বালক বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবন ক্ষতিগস্ত হয়ে পড়লে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নির্মাণকালীন সময়ের জন্য তল্লা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী বালিকা বিদ্যালয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই বছর জমি সংক্রান্ত একটি মামলার কারণে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে একটি ভবনে দু’টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিফট অনুযায়ী পাঠদান চলছে বলে জানান বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেলী জেসমিন।
তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই তল্লা সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি চোখে পড়ে। তবে ভবনটিতে দোতলায় ওঠার জন্য সিড়ির ব্যবস্থা নেই। লোহা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী একটি সিড়ি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ভবনের পাশেই ছোট-বড় গর্তে ভরা পরিত্যক্ত জমি। গর্তগুলোতে পানি জমাট হয়ে আছে। এর শেষ প্রান্তে শিক্ষার্থীদের শৌচাগার।
ভবনটিতে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। যার মধ্যে ২টি অফিস ও বাকি ৪টিতে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। উপস্থিতি কম থাকা সত্ত্বেও নেই তিল পরিমাণ জায়গা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হয়। কক্ষ সংখ্যা কম হওয়ায় অস্থায়ী পার্টিশন করে ৬টি শ্রেণি কক্ষ করা হয়েছে। পার্টিশনের কারণে ছোট্ট শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে পাঠ গ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। দুজনের বেঞ্চে বসতে হচ্ছে চারজনকে। লেখার সময় একজন শিক্ষার্থী তার হাতগুলো মেলে ধরতে পারছেন না।
বিদ্যালয়ের বাইরে কথা হয় অপেক্ষারত অভিভাবক রোমানা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে মেয়ে এখানে পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে ক্লাস করে তারা। কোনোদিন আসতে দেরী হলে বসার জায়গা পায় না, ক্লাস করতে পারে না।’
আরেক অভিভাবক আয়শা ইমাম বলেন, ‘পরীক্ষার সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। ছোট বেঞ্চে চারজন একসাথে বসায়। হাত ঘুরিয়ে লিখতে পারে না, আরেকজনের গায়ে লাগে। এ কারণে রেজাল্ট খারাপ হয়।’
দুই শিফটে বিদ্যালয় দুটিতে হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এত অসুবিধা, কষ্ট সত্ত্বেও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ভর্তি প্রার্থী শিশু আবেদন করে বিদ্যালটিতে। কিন্তু আসন সংকটের কারণে তাদের ভর্তি নিতে পারে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বালক বিদ্যালয়টির শিক্ষক খালেদা আক্তার জানান, ২০১৫ সালে শুধু বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। আসন সংকটের কারণে তা কমে বর্তমানে ৪২৯ জনে দাঁড়িয়েছে।’
প্রধান শিক্ষক সোহেলী জেসমিন বলেন, ‘একটি ভবনে দুটি বিদ্যালয় পরিচালনা করতে খুবই কষ্ট হয়। জায়গার অভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের বসতে দিতে পারি না। পড়াশোনার জন্য সুন্দর পরিবেশ দিতে পারি না। আসন না থাকায় প্রতিবছর পাঁচ শতাধিকেরও বেশি আবেদন ফিরিয়ে দিতে হয়।’
তবে এই স্কুলভবন নির্মাণকাজের জটিলতা নিরসন করতে এগিয়ে আসেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান। তিনি স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জমি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধানে সমঝোতার পরামর্শ দেন। সমঝোতার পর শনিবার স্কুলভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক।
সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির জন্য ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প অনেক আগেই নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের টেন্ডারও হয়েছে আগে। কিন্তু জমি নিয়ে কিছু জটিলতা থাকার কারণে আমরা কাজটি করতে পারছিলাম না। সম্প্রতি সমস্যা সমাধান হওয়ার আমরা কাজটি শুরু করেছি। আশাকরি, দ্রুততার সাথে শেষ হবে।’
এদিকে, শনিবার ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মডেল ডি ক্যাপিটালের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মনির হোসেন সরদার, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি খোরশেদ আলম, ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন, ৪৯ নম্বর তল্লা বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন, ৪৮ নম্বর তল্লা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিনা ইয়াসমিন, প্রধান শিক্ষক সোহেলী জেসমিন, সহকারী শিক্ষক খালেদা আক্তার প্রমুখ।