সাত বছরেও শুরু করা যায়নি সদর উপজেলা মডেল মসজিদের কাজ
প্রায় আট বছর ধরে আটকে আছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প। বার বার স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর এবার বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়ও। জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা যে প্রকল্পের তা চতুর্থ দফায় বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাসে। প্রকল্প ব্যয়ও দুই কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প কাজে বিলম্বের পেছনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর গাফিলতিকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকায় ৫৬০টি ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের ৫ উপজেলায় তিনতলা বিশিষ্ট ৫টি এবং জেলা পর্যায়ে চারতলা বিশিষ্ট একটি মোট ৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। প্রত্যেক মসজিদের জন্য ১৪ কোটি করে মোট ৮৪ কোটি টাকা বাজেট ধরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় সময়সীমা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর ২০২১ সালে একনেকের সভায় প্রকল্পটির সময়সীমা পূনরায় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সম্প্রতি চতুর্থ দফায় ফের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্পের প্রথম দিকে সদর উপজেলার মসজিদের জন্য খাসের জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে একাধিকবার জমি নির্ধারণ করার পরও তা বাতিল করা হয়। ২০২২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে একটি জমি নির্ধারণ হওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় সেটা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালে ভূঁইগড়ের একটি জমি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু একাধিক পক্ষের আপত্তির কারণে শেষে সে জমিতেও নির্মাণ কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বার বার প্রকল্পে স্থান পরিবর্তনের কারণেই মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। আমরা বাস্তায়নকারী প্রতিষ্ঠান। মসজিদের জমি নির্ধারণ, অধিগ্রহণ করে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হলে তারপর আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভূঁইগড়ের জমি বাতিল করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আপত্তির কারণে। এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘সদর উপজেলা মডেল মসজিদ সদর উপজেলা অথবা জেলা প্রশাসনের আশেপাশে শহরে হতে হবে।’ এরপর নতুন করে শহরের চাঁদমারী বাইতুল হাফেজ জামে মসজিদের পাশের একটি জমি নির্ধারণ হয়। যা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের। শামীম ওসমানের কথায় সওজ মৌখিকভাবে জমি দেওয়ার বিষয়ে রাজিও হয়।
তবে সওজে’র ওই জমি মডেল মসজিদ প্রকল্পের জন্য অপর্যাপ্ত। মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ৪৩ শতাংশ জমির প্রয়োজন হলেও চাঁদমারী এলাকায় সওজে’র জরিমান পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। বাকি প্রায় ৯ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এ জমি দিতে মালিকরা নারাজ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য তাদের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চাঁদমারীতে ‘বাইতুল হাফেজ জামে মসজিদ’ অপসারণ করতে হবে। তবে এর জন্য মসজিদটির পিছনে সওজের যে ৩৪ শতাংশ জমি রয়েছে সেখানে জমি দাবি করে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী। যেখানে সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ফলে এক মসজিদে আটকে গেছে দুইটি সরকারি প্রকল্প।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী জমির মালিকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আর গতবছর এমপি সাহেবের কথায় সওজ তাদের ৩৪ শতাংশ আমাদের দেয়ার জন্য রাজি হয়। সে অনুযায়ী, ওই জমির জন্য আমরা সওজকে চিঠিও দিয়েছি। তারা জমি কাকে দিবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।’