‘লালন মেলা নির্বিঘ্নে করার ব্যবস্থা ডিসি নিশ্চিত করবেন’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে অনুষ্ঠিতব্য দু’দিনব্যাপী ‘মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা নির্বিঘ্নে যাতে হতে পারে’ সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকরা৷
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা বন্ধের চেষ্টার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান৷
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ওই গ্রামে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করেছে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী৷ আগামী শুক্রবার শুরু হবে দু’দিনব্যাপী এ আয়োজন৷
এদিকে, লালন মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত শুক্রবার এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে মিছিল করেছে৷ ওইদিন লালন মেলা বন্ধের ‘হুমকি’ দিয়ে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল৷
‘তৌহিদী জনতার’ পক্ষে কয়েকজন মুসুল্লি গত সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে এ মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে৷
মেলা বন্ধের এ চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার মানববন্ধনের আয়োজন করে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী৷ মানববন্ধনে সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মীরা অংশ নেন৷
মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এদেশে অসংখ্য আউল-বাউল-ফকির-সন্নাসী রয়েছে৷ এ বছর লালনের আড়াইশতম জন্মবর্ষ৷ লালন আমাদের দেশ শুধু না, সারাবিশ্বে লালন পরিচিতি পেয়েছেন তাঁর মানবতার বাণী প্রচারের মধ্য দিয়ে৷
‘আঠারো কোটি মানুষের এদেশ আউল, বাউল, ফকির, সন্ন্যাসী, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী বাঙালির সকলের৷ কারও মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া যাবে না৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাই ছিল— এদেশটি সকল মানুষের হবে৷ সকল বৈষম্য দূরীকরণের মধ্য দিয়ে সকল মত প্রতিষ্ঠা আমরা করবো৷’
জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে রাব্বি বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব হচ্ছে শান্তি, শৃঙ্খলা নির্বিঘ্ন করা, মত প্রকাশ এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা৷ নির্বিঘ্নে যাতে লালন মেলা হতে পারে সে ব্যবস্থা রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাকে করতে হবে৷’
মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই সাঁইজির নামে সাধুসঙ্গ হয়৷ এ অনুষ্ঠানে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন প্রশাসন নেয়৷ এ পৃথিবীতে প্রকৃতির সকল প্রাণীর সমান অধিকার৷’
বক্তারা বলেন, ‘এ বিশ্বে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ রয়েছে৷ এ বিশ্বে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে৷ বাংলাদেশে প্রধানত জাতিগতভাবে আমরা বাঙালি হলেও, এদেশে প্রায় পঞ্চাশের অধিক আদিবাসী রয়েছে৷ তারা এ ভূখন্ডের স্বাধীনতার জন্য যেমনি রক্ত দিয়েছে, এ ভূখন্ডের মর্যাদা রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় লড়াই করেছে৷ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং আদিবাসীদের সকলে মিলে আমাদের এ বাংলাদেশ৷ এখানে প্রত্যেকের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে৷’
তারা আরও বলেন, ‘নিজের মত আরেকজনের উপর চাপিয়ে দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা শুধু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেই নয়, এটি একাত্তরের বিরোধীতা এবং আমাদের সংবিধানেরও বিরোধীতা৷ এ জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থে আমরা এটা প্রতিহত করবো৷’
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, সাবেক সভাপতি জাহিদুল হক দিপু, গণসংহতি আন্দোলনের মহানগরের সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব প্রমুখ৷