২৪ নভেম্বর ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১০ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২১:৪৮, ১০ নভেম্বর ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলছে ৪০ কোটি টাকার গভীর ড্রেনের কাজ

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলছে ৪০ কোটি টাকার গভীর ড্রেনের কাজ

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে শুরু হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে বঙ্গবন্ধু সড়কের গভীর ড্রেন নির্মাণ কাজ। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রায় ৭ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)। নাসিক প্রকৌশল বিভাগের মতে, এ প্রকল্পে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জ শহর, মাসদাইর ও আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে জানিয়েছেন নাসিক কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু সড়কের গ্রীনলেজ ব্যাংক মোড় এলাকার পশ্চিম পাশে ড্রেনের নির্মাণ কাজ করছেন শ্রমিকরা। সড়কের পাশে ইট, বালি ও নির্মাণ সামগ্রী রাখায় সড়কের একটি লেন প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে শহরের যান চলাচল। 

নগরবাসী জানায়, প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে ভারী বর্ষন হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। হাটু পানির নিচে তলিয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু সড়ক। এতে যানবাহন ও নগরবাসীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অন্যদিকে শহরের পূর্ব দিকের তুলনায় পশ্চিম দিকের এলাকাগুলো নিচু হওয়ায় রেলওয়ের লাইনের পর থেকে গলাচিপা, দেওভোগ, মাসদাইর ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় সারা বছরই জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এ নিয়ে নাসিক ১৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর ক্ষোভের শেষ ছিল না। 

নগরবাসীর এসব অসুবিধা ও শহরের সুয়োরেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি মাস্টারপ্লান তৈরী করেছিলেন সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সে মাস্টারপ্লানের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আরসিসি গভীর ড্রেন প্রকল্প। মেয়র থাকা অবস্থায় সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরবাসীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে জাপানিজ উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে প্রকল্প দুটি হাতে নিয়েছিলেন এবং টেন্ডারও হয়েছিল।

নাসিক প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, জাপানিজ উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প দুটির অধীনে নাসিক ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ গভীর ড্রেন নির্মাণ করা হবে। মোট ৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাজেটের প্রকল্প দুটির মধ্যে একটির মেয়াদ ২৬ জুন ২০২৫ এবং অন্যটি ১০ ফেব্রæয়ারি ২০২৬ ধরা হয়েছে।

প্রকল্প দুটির অধীনে বঙ্গবন্ধু সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সেকেন্ডারি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। ড্রেন দুটি প্রস্থে ৪ ফুট এবং গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ফুট গভীর হবে। একই সাথে  বঙ্গবন্ধু সড়কের আশেপাশের শাখা সড়কগুলোতে টার্শিয়াল ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের প্রেসক্লাব সড়ক, গলাচিপা, উকিলপাড়া, পূর্ব পাশে প্রেসিডেন্ট রোড, আমলাপাড়া প্রমুখ। 

শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের অধীনে রেলওয়ে লাইনের নিচে আরেকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ড্রেনের উপর ফুটপাত নির্মাণ, বৃক্ষরোপর ও সুন্দর্যবর্ধন করা হবে। 

জানা যায়, রেলওয়ে লাইনের নিচে কালভার্ট নির্মাণের কাজ করা হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে। এ লক্ষ্যে নাসিক বাংলাদেশ রেলওয়েকে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দিবে।

প্রকল্প দুটির প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প দুটি সহজ ছিল না। এ জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে শহরের একেক এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আমরা একেক রকম সমস্যা লক্ষ্য করি। কোথাও ভূমির অসমতা, কোথাও স্লাবের, গভীরতার, ময়লা-আবর্জনার। ভিন্ন ভিন্ন জটিলতাগুলো এক পন্থায় সমাধান সম্ভব নয়। তাই আমরা বিভিন্ন এলাকার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, ডিজাইন ব্যবহার করেছি। 

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পে সম্পূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। বর্তমান ড্রেনগুলো ইট দিয়ে করা। যা সহজেই ভেঙ্গে যায়। অনেক জায়গায় ভেঙ্গেও গেছে। ফলে কিছু কিছু পয়েন্টে পানি প্রবাহের সক্ষমতা হারিয়েছে। তাই এ প্রকল্পে পুরনো কাঠামো ভেঙ্গে নতুন করে করা হবে। সে ক্ষেত্রে এবার আরসিসি ঢালাই করা হবে। এ পদ্ধতিতে করা হলে ড্রেনগুলো অনেক টেকসই হবে। 

রবিউল ইসলাম বলেন, বর্ষার কারণে কাজ শুরু করতে দেরী হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য নগরবাসীর কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তাই আমরা দ্রæত কাজ শেষ করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা ঠিকাদারদের জনবল বাড়াতে বলেছি। আশাকরি, নগরবাসীর বেশিদিন অসুবিধা হবে না।

নাসিক ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ড্রেন অনেক পুরনো। বিভিন্ন স্থানে ড্রেনগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে আছে। এছাড়া বড় সমস্যা হলো অতি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রেসক্লাবের সামনে, গলাচিপা মোড়, প্যানোরোমা প্লাজাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। মূলত বর্তমান ড্রেনগুলোর ধারণ ক্ষমতা এবং পানি প্রবাহ পদ্ধতি সাধারণ সময়ের জন্য পর্যাপ্ত। তবে অতি বৃষ্টি অথবা দুর্যোগকালিন অবস্থার জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে যে পানি ৩০ মিনিটে নামার কথা তা নামতে আরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প দুটি আমাদের ড্রেনেজ মাস্টার প্লানের একটি অংশ। সিটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমাদের মাস্টার প্লানে অনেককিছু রয়েছে। তবে এ পর্যায়ে জাইকার অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু সড়ক এবং শাখা সড়কগুলোর কাজই করা হবে। তাই এ প্রকল্প দুটি অনেক পরিকল্পনার সাথে করা হয়েছে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়