হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে জামাই-শ্বশুর, দিচ্ছেন হুমকি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা করার অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসিডেন্ট রোডের বাসিন্দা গোলাম হায়দার কবির (৬৩) ও তার জামাই (বড়মেয়ের স্বামী) ইমরান আহমেদ টনির বিরুদ্ধে। শামীম ওসমানের বাহিনীর গুলিতে এক তরুণের নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও তারা। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও কবির ও টনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গোলাম হায়দার কবির ও তার সহযোগীরা শহরের আমলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। বাড়ির লোকজনকে মারধরও করে তারা। এই ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট একটি মামলা হলে গ্রেপ্তার হয় কবির। পরে সে জামিনে বেরিয়ে এসে ওই মামলা তুলে নিতে ৬ সেপ্টেম্বর বাদীকে হুমকি দেন।
হুমকির অভিযোগে আবারও সুজন সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই জিডিতে উল্লেখ করা হয়, কবির, তার ছেলে মো. তাইফ আহম্মেদ (২৮), কবিরের সহযোগী মো. পলাশ (৩০) তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। মামলা তুলে নিতে অসম্মতি জানালে তাকে হত্যা ও হত্যার পর লাশ গুম করার হুমকি দেয়।
যোগাযোগ করা হলে সুজন বলেন, ‘শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলুর আত্মীয় টনি। সেই সূত্রে ওসমান পরিবারের সাথে কবিরের সখ্যতা রয়েছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লোকজনের উপর গুলি চালিয়েছে। ওই সময় আমরা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকায় আমাদের বাড়িতে তারা হামলা চালায়। হত্যা মামলার আসামি হয়েও দাপটের সাথে যাকে-তাকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলায় মারা যান ১৮ বছর বয়সী তরুণ মো. ইয়াসিন। ওই ঘটনায় পরে ২৮ আগস্ট ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বড়ভাই মো. সিপন।
এ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ২১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।
মামলাটিতে ৭ নম্বর আসামি গোলাম হায়দার কবির এবং ৫২ নম্বর আসামি তার জামাই ইমরান আহম্মেদ টনি।
স্থানীয়রা জানান, শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলুর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বেড়াতেন কবির ও তার পরিবারের লোকজন। ওসমান পরিবারের সাথে সখ্যতা আছে এই প্রভাবে স্থানীয় এক ব্যক্তির ফ্ল্যাট দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তারা ভোল পাল্টে ফেলার চেষ্টা করেন। তারা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন বলে প্রচার করা শুরু করেন। দাপটের সাথে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করার অভিযোগ করে স্থানীয়রা তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ভুক্তভোগী সুজন বলেন, ‘আমি মামলা করার পরও তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এখন পরিস্থিতির কারণে কিছু ঠান্ডা থাকলেও ভবিষ্যতে আবারও তারা আমার ক্ষতি করতে পারে বলে আতঙ্কিত আছি। প্রশাসনের কাছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’