বস্তায় ভরা ৩ লাশ, পুঁতে রাখা হয় বাড়ির সামনেই

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাটি খুড়ে একই পরিবারের দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার পর বাড়ির সামনের রাস্তার পাশেই পুঁতে রাখা হয় মরদেহগুলো।
এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ওই পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের চিত্র সামনে আসে। স্থানীয়রা মাটির নিচে একটি মানুষের হাত দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- মিজমিজি পশ্চিমপাড়ার প্রয়াত আব্দুস ছামাদের কন্যা পোশাককর্মী লামিয়া আক্তার (২২), তার তিন বছরের ছেলে রাফসান লাবিব এবং লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তার (৩৫)।
পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহত লামিয়ার স্বামী মো. ইয়াসিনকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে। তিনি পাশের দক্ষিণপাড়া এলাকার মো. মোহসীনের ছেলে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে ইয়াসিনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখনো সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেনি।
পুলিশ জানায়, নিহতরা সম্প্রতি পশ্চিমপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া উঠেছিলেন। নিহত লামিয়া ছিলেন একটি পোশাক কারখানার কর্মী। তার মানসিক ভারসাম্যহীন বড় বোন স্বপ্না বাসাতেই থাকতেন এবং লামিয়ার শিশু সন্তানকে দেখাশোনা করতেন।
লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন জানান, “গত সোমবার দুপুরে আমি ওর (লামিয়ার) বাসায় গেছিলাম। এরপর থেকেই ফোন বন্ধ পাইতেছিলাম। ব্যস্ততার কারণে আর খোঁজ নিতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “২০২২ সালে প্রেম করে বিয়ে করেছিল লামিয়া ইয়াসিনকে। কিন্তু ইয়াসিন মাদকাসক্ত ছিল, কোনো কাজ করত না। তার বাবায় রিকশা কিনে দিলেও সেটাও চালাত না ঠিকভাবে। প্রায়ই বোনের কাছে টাকা চাইত, না দিলে মারধর করত। ও ছাড়া আর কেউ এই খুন করতে পারে না।”
মরদেহ উদ্ধারের সময় লামিয়া ও স্বপ্নার মরদেহ হাত, পা ও মাথা খণ্ডিত অবস্থায় বস্তাবন্দি ছিল। আর শিশুটির মরদেহ ছিল অখণ্ডিত।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডটি অন্তত চারদিন আগে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিহতদের ভাড়া বাসায় হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তা হাসিনুজ্জামান বলেন, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের একটি কলাবাগান থেকে ইয়াসিনকে আটক করা হয়। এ সময়ও সে মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।