মতির ঘনিষ্ঠ শাহ আলম মানিক এখন বিএনপি নেতা!
কোনো একসময় একটি ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। তবে বিগত ষোল বছর তিনি কখনই সক্রিয় ছিলেন না। বিতর্কিত, সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতিকে কেন্দ্র করেই তার সক্রিয়তা। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে তিনি আসতেন না। এমনকী চরম দুঃসময়ে এই দলটির কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বিএনপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি হয়ে উঠেন গডফাদার শামীম ওসমানের অন্যতম দোসর মতির সব থেকে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। এই তিনি হচ্ছেন শাহ আলম মানিক।
সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকার আব্দুল কাদের মেম্বারের ছেলে শাহ আলম মানিক মতির সংস্পর্শে গত ষোল বছর ফুলে ফেঁপে বেশ মোটাতাজা হয়েছেন। শামীম ওসমানের দোসর সন্ত্রাসী মতির দক্ষিণ পার্শ্বের বাড়িটিই হচ্ছে শাহ আলম মানিকের। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ার সুবাধে তাদের সম্পর্ক ছিল অনেকটা ফেভিকলের জোড়া। বর্তমানেও এই জোড়া বহাল রয়েছে। তারা একজন অপরের সম্পূরক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিগত ষোল বছর মতির শেল্টারে তেল সেক্টর, ঝুট সেক্টর, ভূমিদস্যুতা, দখল, চাঁদাবাজিসহ হেন কোনো কাজ নেই যেখানে পাওয়া যায়নি শাহ্ আলম মানিককে। এসব অবৈধ কারবারের মাধ্যমে অঢেল ধন সম্পদেরও মালিক বনেছেন তিনি।
স্থানীরা বলছেন, গত ষোল বছরে সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন শামীম ওসমানের দোসর সন্ত্রাসী মতি। বর্তমানে তার সেই সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক শাহ আলম মানিক। মতির সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীদের নিয়ে ইপিজেডে মহড়া থেকে শুরু করে তেল সেক্টর, ভূমিদস্যুতা, দখল ও চাঁদাবাজিতে এককচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে কিতর্কিত এই ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে বিভিন্ন সেক্টরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসী মতি পালিয়ে গেলেও সিদ্ধিরগঞ্জে বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডে তার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। বিশেষ করে বেপজার এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ফলে মতি বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে তার স্থালাভিষিক্ত করাচ্ছেন শাহ আলম মানিককে। এতে তাকে আরও সহযোগিতা করছেন বেপজার সেই শীর্ষ কর্মকর্তাÑ এমন অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
তারা বলছেন, শাহ আলম মানিক ইতোমধ্যে ইপিজেডের বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। মতির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নিয়মিত মহড়াও দিচ্ছেন তিনি। নিজেকে তিনি দাবি করছেন বিএনপি নেতা। যদিও এই দলের সঙ্গে গত ষোল বছর তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। বর্তমানেও এই দলের কোথাও কোনো পদ নেই শাহ আলম মানিকের। তারপরও তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে দখল, চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন। এতে করে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বহু আগে শাহ আলম মানিক ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু বিগত ষোল বছর তাকে একদিনের জন্যও মাঠে দেখা যায়নি। কোনো কর্মসূচিতেও তাকে পাওয়া যায়নি। ষোল বছর কোনো রকম হয়রানি বা মামলার শিকার হতে হয়নি এই শাহ আলম মানিককে। বিগত সময়গুলোতে তিনি সন্ত্রাসী মতির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নির্বিঘ্নে ব্যবসা বাণিজ্য, দখল, চাঁদাবাজি করে গেছেন। এসব অপকর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পাদও গড়েন তিনি।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকায় মতির শেল্টারে রেলের জমি দখল করে নিয়ে সেখানে অটো রিকশার গ্যারেজ করেন শাহ আলম মানিক। বিহারীদের জমি জাল দলিলের মাধ্যমে সৃজন করে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির কাছে বিক্রি অভিযোগ রয়েছে মতির বিরুদ্ধে। এই চক্রের সঙ্গে শাহ আলম মানিকও সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, শাহ আলম মানিকের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিজেই ষোল বছর ধরে এই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে সর্বত্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নিচ্ছে। মূলত শাহ আলম মানিক গোপন আঁতাতের মাধ্যমে মতির সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। মতির সঙে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শে মতির কাজগুলোই শাহ আলম মানিক সামনে থেকে করে দিচ্ছেন। তবে তার লাগাম এখনই যদি টেনে ধরা না যায় তাহলে সামনের দিনে বিএনপিকে যেমন খেসারত দিতে হবে তেমনি সাধারণ মানুষের কাছেও মতির মতো আতঙ্কের আরেক নাম হয়ে উঠবে শাহ আলম মানিক।
প্রসঙ্গত, একাধিক মামলার আসামি হয়েও বিগত ষোল বছর ধরে মতির শেল্টারের কারণে সুরক্ষিত ছিল শাহ্ আলম মানিক। ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলার এজাহারভূক্ত আসামি হওয়ার পরও মতির শেল্টার থাকায় গত ষোল বছর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করেনি।