ছাত্রদলের উপর হামলার পর সিদ্ধিরগঞ্জ রণক্ষেত্র, আহত ১০

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার ও ইপিজেডের ঝুট ব্যবসা দখলে নিতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উপর এক বিএনপি নেতার অনুসারীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই হামলার পর বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের মতো ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে আদমজী এলাকায় প্রায় ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল সোয়া চারটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ভেতরে ইউনিভার্সাল ম্যানসওয়্যার লিমিটেড নামে একটি কারখানার সামনে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগরের অনুসারী কয়েকজন নেতার উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের অনুসারী কর্মীরা। এই ঘটনায় পরে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই সময় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সড়কে নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সংঘর্ষে একজন স্থানীয় সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। তোফাজ্জল হোসেন নামে ওই সাংবাদিক নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, সংঘর্ষ চলাকালীন কয়েকটি মোটর সাইকেলে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি দোকান-পাট। একজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগর বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের দালালরা এখনও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা মানুষকে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে দিচ্ছে না। বিকেলে ইপিজেডের ভেতরে আমাদের কয়েকজন ছাত্রদল নেতার উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীরা বিএনপি নেতা মনির হোসেনের অনুসারী। পরে এলাকাবাসী তাদের প্রতিহত করে।”
এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক মিয়া, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোহন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আরিফ আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান সাগর৷
ছাত্রদলের এই নেতার দাবি, হামলায় অংশ নেন বাবু ওরফে পাবনা বাবু, মানিক, রনি, মিজান ওরফে পাগলা মিজান, সম্রা, জালাল উদ্দিন, দুলাল, সালাউদ্দিন ও খোকনসহ শতাধিক লোকজন। হামলাকারীরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ নেতা ও নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমানের (যিনি বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে) অনুসারী ছিলেন। তাদের বর্তমানে শেল্টার দিচ্ছেন বিএনপি নেতা মনির হোসেন।
যদিও পাল্টা অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা মনির হোসেনের ভাগ্নে রুহুল আমিন। নিজেকে বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে রুহুল বলেন, “ইপিজেড নিয়ন্ত্রণে নিতে চান ছাত্রদল নেতা সাগর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেলে ইপিজেডের ভেতরে আমাদের কিছু লোকজনের সাথে সাগরের লোকজনের হাতাহাতি হয়। পরে সাগর ও তার দলবল আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।”
সংঘর্ষে তাদের কয়েকজন আহত হন বলেও জানান এ বিএনপি কর্মী।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম বলেন, “ইপিজেডের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি হয়৷ পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়৷ এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালানোর খবরও আমরা পেয়েছি৷ এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি৷ পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ উভয়পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়৷”
এ ঘটনায় তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা৷