বদলির পরও সোনারগাঁয়ে থেকে যেতে তদবির করছেন ‘বিতর্কিত’ ওসি বারী
যোগদানের ৪ মাসের মাথায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) বদলি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারীকে। তবে, বদলির আদেশ হলেও তিনি এই থানায় থাকতে ‘জোর তদবির’ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান আব্দুল বারী। তার পর থেকেই নানান বিতর্কিত কাজ করে তিনি বারবার সমালোচিত হয়েছেন। সমালোচনার মধ্যেই গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি মো. মেনহাজুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তার বদলির আদেশ দেওয়া হয়। আদেশে বদলির কারন ‘জনস্বার্থে’ লিখলেও তার পেছনে ছিল ওসির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ।
সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় যোগদানের পর গত ২০ অক্টোবর সেনারগাঁ থানা এলাকার হাসপাতাল থেকে এক নবজাতক চুরি হয়। পরে সেই নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নবজাতকের মা আকলিমা বেগম অভিযোগ করেন, এই নবজাতক চুরির পর হত্যার ঘটনায় তিনি সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দেয়ার পর এই ঘটনায় জড়িত 'সোনারগাঁ মডার্ণ' হাসপাতালের এক পরিচ্ছন্নকর্মীকে গ্রেপ্তার করেন থানার উপপরিদর্শক ওয়ালিয়ার রহমান। পরে থানার ওসি আব্দুল বারী সেই প্রসূতিকে থানায় ডেকে নিয়ে নিজের রুমে বসে বাদীকে ১ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টির মিমাংসা করেন। এবং হাসপাতালের সেই কর্মীকে ছেড়ে দেন। এই ঘটনায় ওসি নিজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও তখন অভিযোগ উঠে।
কেবল নবজাতক হত্যাকারীর কাছ থেকে ঘুষ নেয়াই নয়, অভিযোগ আছে অর্থের বিনিময়ে অসাধু ব্যক্তিদের ‘অনৈতিক সুবিধা’ প্রদান, ঝুট সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু এবং বাস স্ট্যান্ডের পরিবহন চাঁদাবাজদের কাছ থেকেও তিনি নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। থানায় তার রুমে বসে ‘অনৈতিক সুবিধা’ নিয়ে সালিশের মাধ্যমে জমি-পাওনা টাকার মিমাংসা করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া মামলায় নাম না দেওয়া এবং চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে বারীর বিরুদ্ধে আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল বারী সোনারগাঁ থানার ওসি থাকা অবস্থায় গত নয় ডিসেম্বর রাতে মেঘনা সেতু এলাকায় হামলার শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেলসহ ছাত্র নেতারা। এসময় ছাত্র নেতারা দাবি করেন, হামলার সময় তাঁদের মোবইল, ব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজসহ নগদ টাকা লুট হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার পর ওসি বিষয়টিকে ছিনতাইকারীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেন। এমনকি গণমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। ঘটনার দিন তাঁদের কেবল একটি মোবাইলফোন ছিনতাই হয়েছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে একজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে তাকে সেই ঘটনায় জড়িত বলে আদালতে পাঠানো হয়।
তবে আদালত চত্বরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেন, বিনা কারনে তাদের গ্রেপ্তার করে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেছেন ওসি। এমনকি এঘটনায় স্থানীয় তিনজন মুঠোফোন ব্যবসায়ীকে আটকের পর তাঁদের কাছ থেকে ১০০ টি মুঠোফোন লুটে নেয়ার অভিযোগও উঠে তখন।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আব্দুল বারীকে বদলি করা হলেও সোনারগাঁ থানার ওসি হিসেবে এখনও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এই সুযোগে বদলির আদেশ বাতিলের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় তদবির করছেন। এমন বিতর্কিত একজন পুলিশ কর্মকর্তার বদলির আদেশের পর আবারও তার ফেরার তদবিরের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সোনারগাঁবাসী বলছেন, মাত্র চারমাসেই নিজের সিন্ডিকেট তৈরি করে নানান অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন ওসি বারী। ফলে যে কোন মূল্যে সোনারগাঁয়ে থাকতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।