প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় পণ্ড হলো লালন মেলা
শহুরে কোলাহলমুক্ত ছায়াসুবিনিড় গ্রাম মধ্য নরসিংহপুর৷ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের গ্রামটিতে গেল কয়েক বছরের মতো মরমি সাধক ফকির লালন শাহের ভক্তদের ‘মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’র আয়োজন করা হয়েছিল৷
শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘গুরুকর্মের’ মধ্য দিয়ে আয়োজনের শুরু হয়ে দু’দিন ধরে চলতো লালনের সঙ্গীত চর্চা৷ দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা লালনভক্তরা আমন্ত্রিত৷ গান পরিবেশনের তালিকায় শফি মন্ডলের মতো বিশিষ্ট বাউল শিল্পী৷
কিন্তু শুক্রবার দুপুরে ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী’ প্রাঙ্গণে দেখা গেল অপ্রত্যাশিত চিত্র৷
শামিয়ানার জন্য মাটিতে পোঁতা বাঁশগুলোকে দেখা গেলেও গতরাতে টানানো ত্রিপলটি নেই৷ মুক্তিধাম আশ্রম প্রাঙ্গণে মলিন মুখে পায়চারি করছিলেন ফকির শাহ জালাল৷ অদূরে একটি চায়ের দোকানে দু’জন পুলিশ সদস্য বসা৷ চারদিকে চাপা আতঙ্কের আবহাওয়া৷
সাধুসঙ্গের এ আয়োজক জানালেন, সকালে ত্রিপল খুলে ফেলা হয়েছে৷ দূরদূরান্ত থেকে আসা লালনভক্তদের অনেকেই ফিরে গেছেন, বাকিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা হবে না৷ এখানে কারও জড়ো হওয়া ও গানবাজনা নিয়ে প্রশাসনের নিষেধ রয়েছে৷
লালন মেলার এ আয়োজন নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরেই আতঙ্কে ছিলেন ভক্তরা৷ গত শুক্রবার এই লালন মেলাকে ‘ঈমান বিধ্বংসী’ উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবিতে ‘কাশীপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে গ্রামটিতে বিক্ষোভ মিছিল করে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর শতাধিক মানুষ৷
পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে স্থানীয় একটি ঈদগাহে জড়ো হন তারা। সেখানে লালন মেলা বন্ধের ‘হুমকি’ দিয়ে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল৷
‘তৌহিদী জনতার’ পক্ষে কয়েকজন মুসুল্লি গত সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে এ মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে৷
মেলা বন্ধের এ চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার মানববন্ধনের আয়োজন করে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী৷ মানববন্ধনে সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মীরা অংশ নেন৷
লালন মেলা বন্ধের হুমকির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটও৷
প্রতিবাদে কাজ হয়নি, সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার ওই আয়োজন করতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন৷ নিজ প্রাঙ্গণে সীমিত পরিসরে আয়োজন করতে চাইলেও প্রশাসনিক চাপে তা পারেননি বলে জানান ফকির শাহ জালাল৷
আশ্রমের সামনে বসা ফতুল্লা মডেল থানার দুই পুলিশ সদস্যের সাথে কথা হলে তারা জানালেন, এ সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন মুসুল্লি৷ প্রশাসনিকভাবেও পরে এ মেলার অনুমতি দেয়নি৷ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা আশ্রমের সামনে অবস্থান করছেন৷
জানতে চাইলে মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “লালন মেলার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন আয়োজকরা৷ অন্যদিকে লালন মেলা বন্ধে মুসুল্লিদের একটি দল স্মারকলিপি দিয়েছে৷ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় লালন মেলার আয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে৷”
সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন পণ্ড হওয়ায় একদিকে যেমন মর্মাহত লালনভক্তরা অন্যদিকে হামলার আতঙ্কেও আছেন তারা৷