২১ নভেম্বর ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

লালন মেলা নিয়ে ‘আতঙ্কে’ আয়োজকরা

লালন মেলা নিয়ে ‘আতঙ্কে’ আয়োজকরা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামে মরমি সাধক লালন সাঁই স্মরণে দুইদিনের ‘মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা’র আয়োজন করেছে ভক্তরা। কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী’ প্রাঙ্গণে আগামী শুক্রবার থেকে এই আয়োজন শুরু হবে।

তবে, স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে ধর্মীয় প্রসঙ্গ টেনে এই আয়োজন বন্ধের ‘হুমকি’ দিয়েছেন। গত শুক্রবার মুক্তিধাম আশ্রমে তারা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল বলেও অভিযোগ আয়োজকরদের।

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমী’র প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, একদশক আগে নিজের জমিতে তিনি এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। গত সাতবছর ধরে তিনি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালন ভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন।

“আমরা তো কারও বিরুদ্ধে কোনো কথা বলি না। আমরা আমাদের মতো করে সাঁইজির গান চর্চা করি, ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণ করি। আগের কোনো বছর এমনটা হয় নাই। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বাধা আসে নাই। এইবার কয়েকজন তৌহিদী জনতা আমাদের এই আয়োজন বন্ধ করতে হুমকি দিচ্ছে। বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলবে, এমন হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।”

স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার এই লালন মেলাকে ‘ঈমান বিধ্বংসী’ উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবিতে ‘কাশীপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন শতাধিক মুসুল্লি। পরে তারা মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে স্থানীয় একটি ঈদগাহে জড়ো হন। সেখানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

ওই জমায়েতের একটি ভিডিও চিত্রে মাওলানা আউয়ালকে ‘লালন মেলা’ বন্ধে হুমকি দিতে শোনা যায়।

আউয়াল বলেন, ‘অন্যায়কে প্রতিহত করতে আমরা এখানে সমাবেত হয়েছি। আমাদের তৌহিদী জনতা নারায়ণগঞ্জে কম নাই। প্রয়োজনে তৌহিদী জনতা সকলকে নিয়ে আমরা সামনে বাড়বো, কী করে এটি (লালন মেলা) বন্ধ করা যায়, সেটি আমরা দেখবো। প্রাথমিক অবস্থায় আমরা আল্টিমেটাম হিসেবে বললাম। প্রশাসনকে বলবো, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম তৌহিদী জনতা আপোস করতে রাজি না। রসুল বলেছেন, কোনো নাজায়েজ বা অশালীন কাজ দেখলে হাত দিয়ে বাধা দিতে। প্রয়োজনে আমরা হাত দিয়ে বাধা দিবো। প্রশাসনকে বলবো, যা কিছু এখানে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এটা না হয়। অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’

স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘ওইদিন লোকজন জড়ো হইছিল আশ্রমে হামলা করার উদ্দেশ্যে। কয়েকটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাই ঈদগাহে জড়ো হন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় তেমনটা আর হয়নি।’

জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমি আয়োজকদের বলেছি, তারা যেন প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করেন।’

এদিকে, ফকির শাহ জালাল বলেন, ‘আমরা তো সকল আয়োজন করে ফেলেছি। অতিথিদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। প্রতিবছর ডিসি আর এসপি সাহেবকে দাওয়াতকার্ডের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করি। এবারও তাই করবো। কিন্তু প্রতিক্ষণেই হামলার ভয় হচ্ছে।’

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমীর এ প্রতিষ্ঠাতা সোমবার জেলা প্রশাসকের দেখা করেছেন। তার কাছে আয়োজনের অনুমতি চেয়ে লিখিতও দিয়েছেন বলে জানান।

জানতে চাইলে ডিসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘হুজুরদের কয়েকজন মেলা বন্ধের দাবিতে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। অন্যদিকে মেলার আয়োজকরদের কাছ থেকেও অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা বন্ধে হুমকির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটি লালন মেলার আয়োজন নির্বিঘ্নে করতে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়