০২ এপ্রিল ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ২৭ মার্চ ২০২৫

স্বপ্নের দোকান: ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিল ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ক্লাব

স্বপ্নের দোকান: ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিল ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ক্লাব

ঈদ মানেই আনন্দ, আর নতুন পোশাক সেই আনন্দকে আরও রঙিন করে তোলে। তবে সমাজের অনেক শিশুর জন্য নতুন পোশাক কেনার স্বপ্নই অধরা থেকে যায়। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ইউনাইটেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ক্লাব" আয়োজন করেছে ব্যতিক্রমী এক প্রকল্প—"স্বপ্নের দোকান"। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) স্কুল প্রাঙ্গণে এই উদ্যোগের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ঈদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়। পোশাকগুলো সাজানো হয়েছিল দোকানের মতো, যাতে শিশুরা নিজের পছন্দমতো পোশাক বাছাই করতে পারে। শিশুরা যখন রঙিন পোশাকের মাঝে মনের মতো পোশাক খুঁজে নিচ্ছিল, তাদের উচ্ছ্বাস, চেহারার উজ্জ্বলতা আর আনন্দ দেখে আয়োজকদের সমস্ত পরিশ্রম সার্থক মনে হয়েছে। ঈদের নতুন পোশাক হাতে পাওয়ার খুশি তাদের চোখেমুখে যেন ঝলমল করছিল।

আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের এই মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে পরিচালনার আহ্বান জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, "শিক্ষার্থীদের এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। ছোটবেলা থেকেই যদি তারা সমাজসেবার শিক্ষা পায়, তাহলে ভবিষ্যতে তারা দেশের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।" ইউএনও বলেন, "এই আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কীভাবে একটি ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হয়, তা শিখেছে। তাদের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।"

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থী এলিনা থেকে জানতে চাওয়া হয়, রোজা রেখে কাজ করতে কষ্ট হয়েছে কি না। সে বলে, "প্রথমে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল, তবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি দেখার পর সব কষ্ট ভুলে গেছি। যখন দেখি তারা নিজের পছন্দমতো পোশাক বেছে নিচ্ছে, তখন মনে হয়েছে, এতদিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।"

ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ক্লাবের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, "আমাদের সমাজে অনেক শিশু রয়েছে, যাদের বাবা-মা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেন না। আমরা চেয়েছিলাম, তাদের ঈদকে আনন্দময় করে তুলতে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ছোট উদ্যোগ সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই আয়োজনকে আরও সফল করেছে।"

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "ঈদ আমাদের কাছে শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানবিকতার এক বিশাল উপলক্ষ। আমরা চাই, আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটুক। এখন যারা এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যতে তারাই সমাজের জন্য আরও বড় বড় উদ্যোগ নেবে। আমরা চাই, এই কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে পরিচালিত হোক, যাতে আরও বেশি শিশু উপকৃত হতে পারে।"

এই উদ্যোগের জন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পোশাক সংগ্রহ, বাছাই, সাজানো, এবং বিতরণ—সবকিছু তারা নিজেরাই পরিচালনা করেছে। আয়োজকদের মধ্যে অনেকেই রোজা রেখেছিল, কিন্তু শিশুদের আনন্দ দেখে তাদের সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল। নতুন পোশাক হাতে পেয়ে শিশুরা ছিল উচ্ছ্বসিত। তাদের হাসিমুখ আর চোখের উজ্জ্বলতা বলে দেয়, ঈদ মানেই নতুন পোশাক, আর নতুন পোশাক মানেই অপার আনন্দ। তারা জানায়, নিজেদের পছন্দমতো পোশাক বেছে নিতে পারায় তাদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এই উদ্যোগ কেবল একটি স্কুল বা ক্লাবের সীমাবদ্ধ কর্মসূচি নয়, বরং এটি মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যদি সমাজের প্রতিটি মানুষ এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশু ঈদের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। "স্বপ্নের দোকান" প্রকল্পটি প্রমাণ করে যে, সত্যিকারের আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়