লাক মিয়ার একাউন্টে ১৪ হাজার কোটি টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লাক মিয়ার বিরুদ্ধের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ইউপি চেয়ারম্যানের ৪৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুদকের মহাপরিচালক মো. আখতার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, লাক মিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলাও করেছে দুদক।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলায় যৌথ বাহিনীর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হন লাক মিয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে করা একাধিক মামলার আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতারও অভিযোগ রয়েছে।
ব্রাহ্মন্দী ইউপির এ চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
দুদকের মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, লাক মিয়ার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিসহ মোট সম্পদের মূল্য ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যদিও তার বৈধ আয় মাত্র ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তার ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা জমা এবং ৭ হাজার ১৮৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
লাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি নিয়েও অনুসন্ধান করেছে দুদক। অবৈধভাবে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি।
প্রাথমিক তদন্তের বরাতে দুদকের কর্মকর্তারা জানান, লাক ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে তার স্ত্রী মাহমুদার ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৪৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা জমা এবং ২৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিকে, লাক মিয়ার ব্যক্তিগত কর্মচারী মো. মহসিন মোল্লার বিরুদ্ধেও তদন্তে নেমেছে দুদক। তার মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১২ হাজার টাকা। তা সত্ত্বেও, তার ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ৩২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে।
এনআরবি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং মেসার্স এনআরবি ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মালিক হিসেবে পরিচিত মহসিন তার অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা জমা এবং ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।