প্রগতি লেখক সংঘের তৃতীয় জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের তৃতীয় নারায়ণগঞ্জ জেলা সম্মেলন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা দেশের সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি, প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পীদের ভূমিকা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন কবি রঘু অভিজিৎ রায়, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রদীপ সরকার, সমমনার সভাপতি সালাউদ্দিন আহম্মেদ, প্রগতি লেখক সংঘের জেলা সদস্য দুলাল সাহা, সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, অর্থ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, দীপঙ্কর দে, সহ-সভাপতি হাবিব সিদ্দিকী ও সদস্য রাশিদা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা ধরনের আক্রমণ চলছে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় বিভেদ, উগ্র ধর্মান্ধতা এবং জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। লালন আখড়ায় হামলা, মাজারে হামলা, ভিন্ন ধর্ম ও আদিবাসীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা এসবের জলন্ত উদাহরণ। বক্তারা বলেন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর সমাজব্যবস্থার পরিবর্তে ধর্মান্ধতার মাধ্যমে সমাজে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।

তারা আরও বলেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনার লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্তবুদ্ধি, গণতন্ত্র এবং সাম্যের ভিত্তিতে একটি উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন বিকাল ৩টায় শুরু হয়। প্রধান অতিথি উদ্বোধন ঘোষণার পর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মাকসুদা ইয়াসমিন। সাংগঠনিক ও অর্থ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস এবং প্রতিনিধিরা এসব রিপোর্টের ওপর আলোচনা করেন। এরপর দুলাল সাহা প্রস্তাবিত নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন।

নবনির্বাচিত ১৭ সদস্যের জেলা কমিটিতে আছেন সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি শহিদুল আলম নান্নু, শ. ম. কামাল হোসেন, সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, বিলকিস ঝর্ণা, সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজলক্ষ্মী, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, অর্থ সম্পাদক দীপঙ্কর দে, সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদা ইয়াসমিন, প্রচার সম্পাদক আলমগীর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক তিথি সুবর্ণা, কমিটি সদস্য দুলাল সাহা, দীন ইসলাম দীপু, সুনীল কৃষ্ণ মাঝি, হাবিব সিদ্দিকী, ফাল্গুনী দাস।

কাউন্সিল অধিবেশন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন এবং আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশিত হয়।